Tuesday, December 06, 2016

শূন্যতার দিকে

শূন্যতার দিকে
================
*
শিশির এক দৃষ্টে তমার দিকে চেয়ে
রইলো।
-স্যার, আমার হাতের কাঁকন জোড়া
দেখছেন?
-হু । তাইতো দেখছি। খুব সুন্দর! কে
দিয়েছে?
তমা চোখের পানি মুছতে মুছতে
বললো, আমাকে গতকাল পাত্রপক্ষ
দেখতে এসেছিল। এগুলো তাদেরই
দেয়া। তমার চোখের পানি গাল বেয়ে
পড়তে লাগলো।
*
শিশির ভেবে পেলো না সে কি
করবে? তার কি করা উচিত? নিজের
মধ্যে বড় শূন্যতা বোধ করলো। এতো
সুন্দর একটা মেয়ে তার সামনে বসে
কাঁদছে অথচ তার কিছুই করার নেই।
তার ইচ্ছা হলো তমার মাথায় হাত
রেখে বলবে, এই মেয়ে, কাঁদছো কেন?
আমি তো আছি।
*
সে কিছুই করতে পারবে না। দারিদ্র
তাকে গ্রাস করেছে। নিজের পড়ার
খরচ চালানোর জন্য দুটা টিউশনি
করে। বাবা-মায়ের অভাবের সংসারে
রয়েছে দুই ছোট বোন। তাদের কথা
তাকে ভাবতে হয়। প্রায়ই কল্পনা করে,
একদিন সে ভালো চাকরি পাবে, সবার
দুঃখ ঘোচাবে।
*
তমাকে সে পড়াতে এসেছিলো তিন
বছর আগে এ তিন বছরে তমা যেমন
তেমনই আছে। একটুও বদলায়নি। এ
মেয়েকে নিয়েই শিশির মাঝে মধ্যে
স্বপ্ন দেখতো পাশাপাশি হাঁটার,
ভালো কোন রেস্টুরেন্টে গিয়ে
খাওয়ার।
*
শিশিরের ভালো লাগাটা তমাকে
বলা হয়ে ওঠেনি। কারণ তমারা ধনী।
তাদের বাড়ি- গাড়ি আছে।তবে ধনীর
মেয়ে হলেও তমা উচ্ছৃঙ্খল ছিলো না।
পোশাকে ,চলনে, ব্যবহারে সে খুবই
শালীন। হয়তোবা এজন্য নিজের
অজান্তেই তমাকে সে ভালোবাসতে
শুরু করেছিল।
*
- স্যার, আজ আর পড়বো না। আমার
মনটা ভীষণ খারাপ। আপনার কি স্যার
কিছুই করার নেই? আপনি কি স্যার
পারেন না আমাকে নিয়ে যেতে
আপনার সাথে। কাঁদতে কাঁদতে
কথাগুলো বলে তমা ভেতরে চলে গেল।
*
শিশির বোকার মতো শুধু চেয়ে রইলো।
কিছুক্ষন পর তমার মা রুমে এসে বললেন
, স্যার , তমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।
ছেলে কানাডা থেকে এসেছে বিয়ে
করতে। এক মাসের ভেতর চলে যাবে।
তাই দেরি করলাম না। এতো ভালো
পাত্র তো আর সহজে পাওয়া যায় না!
স্যার , এই খামে আপনার বেতন। কাল
থেকে আপনাকে আর কষ্ট করে আসতে
হবে না। তবে স্যার তমার বিয়েতে
অবশ্যই আসবেন। কার্ড পাঠিয়ে
দেবো।
শিশির দাঁড়িয়ে কথাগুলো শুনলো।
কিছুই বললো না। শুধু বললো , যাই।
*
শিশির রাস্তায় নামলো। তার বুকে
প্রচন্ড শূন্যতা বোধ হলো সে হাঁটতে
লাগলো। ধীরে ধীরে যেন সে শূন্যের
দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আকাশে মেঘ
জমেছে। ফোটা ফোটা বৃষ্টি শুরু হলো।
বৃষ্টি কি তার কষ্ট ধুয়ে ফেলতে
পারবে? বাস্তবতার কাছে অসহায়
শিশির বুকে চেপে থাকা কষ্টগুলো
বৃষ্টির কাছেই সমর্পণ করলো।

No comments:

Post a Comment