Friday, December 02, 2016

অশ্রু

অশ্রু
,
,
বিবাহ!কাহার বিবাহ!সলিল তো
বলিয়াছিল এইরূপ বিবাহ সে করিবেনা
। তথাপি মুখে যে কিছু বলিবে তাহাও
নহে। আমি যে তাহাকে
ভালোবাসিয়াছি,বুঝাইয়াছিকিন্তু
সে সে বুঝিল কি-না তাহা বুঝিতে
দিল না।সেও ভালোবাসে জানি
,কিন্তু জানি কি-না সে সত্য জানিতে
চাহিল না।তথাপি বিচলিত হইয়া
পরিলাম।সারাবাড়ি খুঁজিয়া শেষ
অবধি দেখি,বাঁশবাগানের একটা
গাছে হেলান দিয়া কি যেন
ভাবিতেছে। আমি নিকটে
দাঁড়াইয়া,বিন্দুমাত্র ও ঠাহর পাইলনা।
সমুখে দাঁড়াইয়া দেখিলাম দুচোখের
কোল ঘেষিয়া অশ্রু ঝরিতেছে।
আর সকলের সঙ্গে আমিও ব্যস্ত হইয়া
পরিয়াছি লোকজন
খাওয়াইতে,বসাইতে।কিন্তু বুকের
ভিতরটায় কেমন যেন একটা অস্বস্তি
পীড়া দিতে লাগিল। একবার ,সলিলকে
একবার দেখিয়া লই। লাল শাড়ী আর
টিকলিতে তাহাকে কিরূপ
মানাইয়াছে।তাহার সৌন্দর্য আমি কি
দেখিলাম ! তাহা আমি প্রকাশ করিতে
পারিব না। ঘোমটা টানিয়া সলিল
এমন ভঙ্গিতে তাকাইয়া রহিয়াছে
প্রাণপণে তাহার দৃষ্টি এড়াইয়া দ্রুত
পালাইলাম।
বিবাহ সম্পন্ন হইয়া গিয়াছে । বর
দেখিতে বেশ । তবে তাহার সাথে
মানাইয়াছে কিনা তাহা বলিতে
গেলে এইটুকু বলিতে পারি তাহার
সঙ্গে মানাইতে পারে এমন কেহ পয়দা
হইয়াছে কিনা সন্দেহ।
বছর খানেক পরে সলিলকে একবার
দেখিয়া আসিবার জন্য মন কেমন
করিতে লাগিল । ছুঁতো খুজিতেছি এই
সময় আমার এক দূর সম্পর্কের চাচাতো
ভাইয়ের বিবাহ স্থীর হইয়া গিয়াছে ।
মুহূর্তে একরাশ পাগলা হাওয়া
খেলিয়া গেল হৃদয়ে । ইহারই মাঝে
কাহার কাছে জানিয়া শুনিয়াছি
,শান্ত সুবোধ ছেলেটি ভালো নয়। প্রভু
তাহাকে সুখী করো । এই প্রার্থণা
করিতে করিতে উদগ্রীব হইয়া রহিলাম
সেই দিনের অপেক্ষায় ।
নির্দিষ্ট দিনে যাত্রা শুরু করিলাম ।
বুকের ভেতরটায় কেমন এক
ছটফটানিতে ভুগিতেছি। তাহাকে
একবার দেখিব।সে কি খুশি হইবে
আমাকে দেখিয়া ? নাকি অস্বস্তিতে
পড়িবে।
বাজারে নামিয়াই শান্তর সহিত দেখা
,পথে বাক্য ব্যয় হইল সৌজন্যমূলক,
যাহা না হইলেই নয়। শান্ত চেঁচাইয়া
বলিল, " সলিল, - কে আসিয়াছে দেখ !!
গেটটা খোল।"আমি ভুত দেখিয়া যেন
থমকাইয়া গেলাম। সলিল মাথায়
আঁচলটা গাল অবধি টানিয়া সেই
হাসিটা ছড়াইয়া দিল। চেহারার এ কি
হাল হইয়াছে।তাহার দিকে
দ্বিতীয়বার চাহিতে ভেতরটায়
মুচড়াইয়া উঠিল।চোখ দুইটা ফোলা
লালচে ।মনে হয় অনেক্ষণ কাঁদিয়াছে।
হঠাৎ তাহার বাম পাশটা দৃষ্টিগোচর
হইলে সমস্ত হৃদপিন্ড হু হু করিয়া উঠিল।
শান্ত কি তাহাকে প্রহার করিয়াছে!
তাহার বাম গালে চারটা আঙুল বসিয়া
গিয়াছে।অবশেষে যখন বিদায়
লইয়াছি -কতবার ভাবিয়াছি তাহার
দিকে আর তাকাইবনা। কিন্তু
পারিলামনা।গোধূলীর কামিনীর ন্যায়
স্নেহময় তাহার হাসি আমাকে মাতাল
করিত তাহাই আজ হৃদয়কে ক্ষত বিক্ষত
করিতেছে। কলুষিত সমাজের কঠিন
শিকলে চৌদ্দবার লাথি কষিয়া
রক্তপাত ঘটাইয়াছি ।তথাপি শিকল
টলিল না।তাহার এইরূপ ঝরিয়া পড়া
সহিতে না পারিয়া দেশান্তর হইলাম।
খোলা মাঠে শুইয়া চাঁদ দেখিতেছি
ঐখানেও তাহার মুখ ভাসিতেছে,হাঁটুজ
লে নামিয়া মুখে জল ছিটাইতেছি
তাহারই ছায়া জলে কাঁপিতেছে,
আকাশে তাকাইয়া একমনে মেঘ
দেখিতেছি ঐখানেও তাহার মুখ স্পষ্ট
হইয়া উঠিতেছে। এই ভাবিয়া ভয়
হইতেছে-সত্যিই কি পাগল হইয়া
যাইতেছি!
ভাবিয়াছিলাম দেশে আর ফিরিবনা
কিন্তু ছাতীয়ানীর ভেজা মাটির গন্ধ
আমাকে কেবল টানিতে লাগিল
চুম্বকের ন্যায়।দেশে না ফিরিয়া
পারিলামনা। তাহারই দ্বারপ্রান্তে
পৌঁছিয়া থমকিয়া দাঁড়ইলাম।শুনিয়া
ছি ,তাহার অসুখ করিয়াছে কিন্তু কি
এমন অসুখ যে তাহাকে এ রকম বিনাশ
করিয়াছে। দ্রুত তাহার পাশে বসিয়া
পরিলাম। সলিল ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায়
বলিল - "কিষাণ কোথায় ছিলে এতটা
দিন-------- ।শরীর যে একেবারে
ভাঙিয়া পড়িয়াছে ।"এই প্রথম তাহার
দৃষ্টি হইতে দৃষ্টি ফিরাইলামনা। সে
আবার বলিয়া উঠিল ,"কৃষান তোমাকে
একবার দেখিব বলিয়া এখনও
প্রাণপাত হইতেছে না।" আমি আরও
কাছে সরিয়া আসিয়া তাহার দুইটি
হাত কষিয়া ধরিলাম।এ হইতে পারেনা
সলিল - আমি তোমাকে নিঃশেষ হইতে
দিব না।আমার কথা সে শুনিতে পাইল
কিনা বুঝিলাম না। দেখিলাম, তাহার
চোখের কোন ঘেষিয়া কয়েক ফোটা
অশ্রু গড়াইয়া পড়িল!!
__গোধূলী স্বপ্ন (মম)

No comments:

Post a Comment