Friday, June 22, 2018

চোর || Thif

চোর
-------------------
*
গভীর রাত । ঘুম ভেঙে যায় নীরবের।
তুলিকে নিরব ভারোবাসে।ইদানীং
তুলির আচরন নিরবের কাছে রহস্যজনক
হয়ে উঠেছে।তুলি নাকি কোন ছেলের
প্রেমে পড়েছে।কথাটি কয়েকবার
নিরবের কানে এসেছে।নিরব শোনা
কথায় বিশ্বাস করেনা।নিজের চোখে
দেখতে চায়, কে সেই বাহাদুর??
'সামনে একবার পেলে হতো, মাংস
থেকে হাড্ডি আলাদা করে দিতাম।'
রাগে ফুসতে থাকে। তার ভালোবাসায়
অন্য কেউ ভাগ বসাবে, এটা চলবে না।
*
সামনে মাসের ১২তারিখে তুলির
জন্মদিন।নিরব মনে মনে অনেক স্বপ্ন
একেছে, এবার সে তুলিকে একটা
ভালো উপহার দেবে।গত বছর তুলি
নিরবকে কয়েকবার বলেছিল । কিন্তু
ওইদিন সে যায়নি।কারণ হাত খালি
ছিল তার।সেদিন মনের দুঃখে
ফার্মাসি থেকেআনা দুটি ঘুমের
ট্যাবলেট খেয়ে ডাটে টানা আঠারো
ঘন্টা ঘুমিয়ে ছিল।
এবার সে গতবারের মত ব্যর্থ হবে না।
এবার তাকে জয়ী হতেই হবে।তুলির
চোখে তার প্রেমিক হয়ে শ্রেষ্ঠত্ব
দেখাতেই হবে।
*
হাতে সময় খুব কম। এমাসে আছে মাত্র
৬দিন।নানান চিন্তা মাথায় ঘুরতে
থাকে। টাকা কোথায় পাবে সে?
পরের দিন স্কুলে গিয়ে প্রাইভেট
টিচারকে বললো, এ মাসে সে পড়বে
না। বাসায় এসে নানান ফন্দি করে
সে। নিজের ঘর থেকে চুরি করে ধান
বিক্রি করে সে। সুযোগ সন্ধানী
ক্রেতা আধা দাম দিয়ে ধান কেনে।
নিরব কিছু বলতে পারে না। রোজ
টিফিন না খেয়ে , এবং হেটে স্কুলে
গিয়ে উপহারের পয়সা জমাতে থাকে।
আর কল্পনায় দেখে সেই শুভ দিনের।
*
দেখতে দেখতে দশ তারিখ পার হয়ে
যায়। আর একটা দিন বাকি। নিরব
রোজ বই নিয়ে প্রাইভেট পড়ার নামে
বেরিয়ে যায়। মাকে মিথ্যা বলে সে।
টিচারের খুব বিপদ তাই তাকে এ মাসে
অগ্রীম দিতে হবে।মানিরবের হাতে
অগ্রিম মাসের টাকা তুলে দেন। সব
মিলিয়ে এক হাজার দুইশ টাকার মত
হলো।সে ভাবে এবার তার সম্পর্কটা
পোক্ত হবে। তুলি এবার নিরবের উপহার
পেয়ে খুশি হবে আর কিপ্টুস বলে
টিটকিরি দেবে না।
*
টাকা নিয়ে নিরব মার্কেটের
উদ্দেশ্যে রওনা হয়। বাসে প্রচন্ড ভীর।
ভেতরে দাড়িয়ে সে ভাবলো , এখান
থেকে যদি কিছু টাকা বাচে তাহলে
মায়ের জন্য কিছু একটা কিনবে।
ভীরের ভিতর কয়েকবার পকেটে হাত
দিয়ে দেখলো তার টাকা ঠিক আছে।
*
মার্কেটে ঢুকে নিরবের মাথা খারাপ
হয়ে গেল। এই টাকার মধ্যে ভালো
কোন উপহার পাওয়া গেল না। অবশেষে
মন খারাপ করে ফুটপাত ধরে হাটতে
থাকে। হঠাৎ চোখ পড়ে রাস্তার এক
হকারের দোকানে।বিভিন্ন ধরনের
মুক্তা ও পাথরের নেকলেস ও কানের
দুল। নিরব এক জোড়া নেকলেস পছন্দ
করে অনেক দর কষাকষি করে সাতশ
টাকা স্থীর করলো। কিন্তু পকেটে হাত
দিয়ে নিরব দেখলো পকেট শূন্য।
পাগলের মত সব পকেট হাতরালো সে।
না কোথাও নেই। নিরবের শরীর
ঘামতে থাকে।
দোকানদার মুখ বাড়িয়ে নিরবের
উদ্দেশ্যে কিছু বাজে কথা বললো।
নিরব নীরবে সহ্য করে বাড়ির দিকে
রওনা দিলো। তার পকেটে একটি
টাকাও নেই। ৫কিলোমিটার পথ হাটতে
হাটতে অনেক রাতে বাড়ি ফিরলো
সে।
অনেক রাতে বাড়ি ফেরার কারনে
মায়ের অনেক ঝাড়ি খেতে হলো।
*
বিছানায় বসে বসে নিরব ভাবে এখন
কি করবে সে? কাল তুলির জন্মদিন।
তুলিকে সে খুশি করবে কিভাবে? ছোট
চাচার কাছে গেলে হয়তো কিছু
পাওয়া পাওয়া যাবে। কিন্তু প্রশ্ন
করবে একগাদা। ছোট চাচাকে একদম
সহ্য করতে পারে না নিরব। তুলিদের
ছাদে গিয়ে তুলির সাথে আড্ডা দিতে
দেখেছে সে আলমচাচাকে। তবুও নিরব
কোন উপায় না পেয়ে আলমের রুমে
গেল।আলম ছিলেন না। কি মনে করে
আলমের ড্রয়ার খুললো নিরব।অনেক
কিছুর ভেতর রঙিন একটি প্যাকেট
পেয়ে খুলে দেখলো একটি সোনার
আংটি। নিরবের চোখের সামনে
ভেসে ওঠে তুলির মিষ্টি মুখখানা।
মুহূর্তে ছোট প্যাকেট থেকে আংটি
লুকোলো নিজের পকেটে। ফিরে এলো
নিজের ঘরে। সারারাত নিরবের ঘুম
হলো না কখন আলম চাচা আংটির জন্য
ওকে চেপে ধরে সে ভয়ে।
*
মা এসে নিরবের রুম তল্লাশী শুরু
করলেন। নিরব বুঝলো যুদ্ধ শুরু হয়ে
গেছে। নিরবের বুক ঢিপ ঢিপ করতে
লাগলো। সাহস সঞ্চয় করে জিজ্ঞেস
করতেই মা বললেন, গতরাতে আলমের
রুম থেকে একটি আংটি চুরি হয়েছে।
তাই তোর ঘর তল্লাশি করছি।
নিরব বললো, চাচা তো আংটি পরেনা।
তিনি তো মিথ্যাও বলতে পারেন।
মা আর খোজাখুজি না করে রুম থেকে
চলে গেলেন।
*
এদিকে আলমের মন খারাপ। নিরবকে
কিছু বললেন না তিনি। আলমের স্বপ্ন
ছিলো আংটি নিজ হাতে তুলির
আঙুলে পরিয়ে দিবেন। খুব পছন্দ করে
কিনেছিল আংটিটা।
*
নিরব গোসল সেরে খুব খুশি মনে নতুন
কাপড় পড়ে তুলিদের বাড়ির উদ্দেশ্যে
বাড়ি থেকে বের হলো।
*
আংটি দেখে তুলি নিরবের মুখের
দিকে তাকিয়ে থাকে।
নিরবও একদৃষ্টে চেয়ে থাকে।
তুলির চোখে দুষ্টুমির হাসি।
আজ তুলিকে খুশি করতে পেরেছে
নিরব।
হঠাৎ আলমচাচাকে তুলিদের বাড়িতে
ঢুকতে দেখে নিরবের এক অজানা ভয়
এলো । নিজেকে লুকালো সে।
আলমকে দেখে তুলি মিট মিট করে
হাসতে থাকে। আলমের হাত ধরে তুলি
তাকে নিজের রুমে নিয়ে যায়।
নিরবের বুক ধপ করে ওঠে । শালার পুত।
*
নিরব চুপিসারে তুলির রুমের জানালা
ঘেষে দাঁড়ালো । কান পাতলো। একটি
ছিদ্র দিয়ে ভেতরে চোখ রাখলো।
আলমের হাতে হাত রেখে তুলি বলছিল ,
-আলম, তোমার উপহার পেয়েছি।
-তার মানে? আলম চোখ তুলে তুলির
দিকে তাকালো।
তুমি বাম হাতটি বাড়িয়ে নিরবের
দেয়া আংটি দেখালো।
আলম জিজ্ঞসু দৃষটিতে তুলির দিকে
তাকালো।
-তোমার ভাতিজা নিরব চুরি করে এনে
আমাকে উপহার দিয়েছে।
- নিরব!
-হ্যা নিরব। নিরবের আনা আংটি
দেখেই বুঝেছি।সে আংটি পাবে
কোথায়।
-আচ্ছা তুলি , আংটি যে চুরি হয়েছে
তুমি জানলে কিভাবে?
-কেন? তোমার বন্ধুর কাছে। যার কাছ
থেকে তুমি টাকা ধার করে আরেকটি
আংটি কিনে এনেছো।
তুলির হাতটি নিজের হাতে আদর করে
আংটি পরিয়ে দিল আলম।
*
নিরব আর কিছু দেখতে চাইলো না।
দ্রুত সটকে পড়লো। বাড়ির দিকে
বিষন্ন মুখে হাটতে হাটতে সে শুধু
ভাবছিলো , হায়রে কপাল, শেষে হলাম
আংটি চোর !
---
গোধূলি স্বপ্ন

কবিতা নীড় || Kobita Nir

কবিতা নীড়
-----------
*
আজ সারাটা দিন কেন যেন
কবিতাকে মনে পড়ছে খুব। মনটাকে
কিছুতেই কোনদিকে ঘুরানো
যাচ্ছেনা। এই মনযোগটা পেতেই
মেয়েটা কি না করেছে!
পাগলী ছিলো বটে। কিন্তু সে
পাগলামী অনেক উপভোগ করতো নীড়।
খামখেয়ালীর বসে অনেক অবহেলা
আর কষ্টও কম দেয়নি মেয়েটাকে।
অথচ আজ কেন জানি অনেকদিন পর
কবিতার পাগলামী নীড়ের একটু
মনোযোগ পাবার আপ্রাণ চেষ্টা, এমন
কি অদৃশ্য ছায়া হয়ে নীড়ের সঙ্গী
হবার চেষ্টায় অবিচল থাকা
কবিতাকে ভীষণ ভীষণ মনে পড়ছে
নীড়ের।।
,
সময়ের আবর্তে ব্যস্ততায় ভবিষ্যত
গড়ার মাঝখানে অনেকটা সময় পার
হলেও মনে হচ্ছে এইতো সেদিনের কথা
, চোখের সামনেই ভাসছে সব।
খুব আনন্দেই দিন কাটছিল দুজনের।
একে অন্যের কেয়ার সারাদিনের সব
কিছু শেয়ার না করলে যেন জীবনের
একটা দিন অপূর্ণ থেকে যেত দুজনেরই।
ভুল করে ভুল সময়ে অনেকটা
অপ্রত্যাশিত ভাবেই পরিচয় হয় কবিতা
নীড়ের। প্রথম দিকে কবিতা নীড়কে
তেমন পাত্তা না দিলেও নীড়ের
বেকার জীবনের অফুরন্ত সময় কাটাতে
কবিতাকে আঁকড়ে ধরার চেষ্টায় হার
মানতে বাধ্য হলো । নীড় খুব সাধারন
ঘরের সাধারন একটা ছেলে। তবে
মানুষকে আকৃষ্ট করার অসাধারন একটা
গুন আছে তার মাঝে। নতুন নতুন বন্ধুত্ব ,
তাদের জানার আগ্রহ , এবং মায়ায়
বাঁধতে তেমন বেগ পেতে হতো না তার।
তবে কবিতাকে ঘিরে তার অন্যরকম
ভালো লাগা তৈরি হয়েছে।কবিতার
সারল্য তাকে মুগ্ধ করে। কবিতার
প্রতি নীড়ের মনোযোগটা কবিতাও
অনুভব করতে শুরু করে। ভালো লাগাটা
তখন থেকেই শুরু।
,
নীড়ের ভাঢলোলাগা মন্দ লাগা, ছোট
বড় দুঃখগুলো, নীড়ের প্রতিবন্ধকতাগুল
ো, লক্ষ্য , স্বপ্ন কিছুই আর অজানা
রইলো না কবিতার। খুব মনোযোগ দিয়ে
তার কথাগুলো শুনতো আর নীড়ের স্বপ্ন
গুলো যেন সত্যি হয় তার জন্য
সৃষ্টিকর্তার কাছে নীড়ের হয়ে
প্রার্থনা করতো। নীড়ও যেন তার
নির্ভরযোগ্য একটা ছোট্ট নীড় পেল।
দুজনেই সবার অন্তরালে নিজেদের
অজান্তেই কখন যেন ছোট্ট সুখের
কবিতা নীড় রচনা করে ফেললো।
যেখানে নিজেকে নির্দিধায় সমর্পণ
করা যায়।

দিন যায় বছর যায় ।এতটুকু ভাটা
পড়েনি তাদের কবিতা নীড়ে। এর
গভীরতা যেন বেড়েই চলেছে।
সারাদিন খুনসুটি , অভিমান,
ভালোবাসার যত্নে অভিমান
ভাঙানো , ছোট ছোট স্বপ্ন বোনা ,
একে অন্যের প্রতি নির্ভরশীলতা
একজনকে ছাড়া অন্যজনকে অসম্পূর্ণ
করে তুলতো।নীড়ের প্রতিটি সদ
পদক্ষেপে অনুপ্রেরণা হয়ে উৎসাহিত
করতো কবিতা। ব্যর্থতার গ্লানীতে
কখনো ডুবে যেতে দেয়নি তাকে।
দশরথ হয়ে পরম ভালোবাসায়
অনুপ্রেরণায় আগলে রেখে নির্ভরতা
দিয়েছে পাশে থেকে। অগোছালো
নীড় প্রথম অনুভব করলো সশরীরে সাথে
থাকাকে পাশে থাকা বলে না। যোজন
দূর থেকেও খুব কাছে এবং পাশাপাশি
পথ চলা যায়। কেউ কাউকে না ছুঁয়েও
জীবন দিয়ে স্বত্তায় আষ্ঠেপৃষ্ঠে
জড়িয় থাকা যায়। প্রতিটি ভোর
তাদের মধুর সম্পর্কের সুচনার সাক্ষী ।
প্রতিটি রাত তাদের স্বপ্ন ছোঁয়া দিন
শেষে আগামী স্নিগ্ধ প্রভাত রচনার
প্রেরণার সঙ্গী।
,
অনেক প্রতিক্ষা আর চেষ্টায়
নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যম
পেল নীড় । সেই সাথে ব্যস্ততাও ঘিরে
ফেললো চারপাশটা। অগোছালো নীড়
নিয়মে কিছুটা বাধা পড়লো। সংগী
ছিলো কবিতা। পরিবারের প্রতি
দায়িত্বটাও যেন বেড়ে গেল।এভাবে
নিজের অজান্তেই কখন যেন
কবিতাকে অবহেলায় ভাসিয় দেয় সে
তা বুঝতেও পারে না।কিন্তু কবিতা
তা-ও মানিয়ে নিয়ে নীড়কে
ভালোবাসায় পরম মমতায় বেধে
রাখতে সচেষ্ট আগের থেকে অনেক
বেশি। তার শুধু একটাই ভাবনা নীড়
যেন নিজেকে কখনোই একা না ভাবে।
,
ধীরে ধীরে নীড়ের অনিচ্ছাকৃত
অবহেলা বাড়তেই থাকে। কবিতার
কথা ভাববার সময়টাও সংকীর্ণ হয়ে
যাচ্ছে। নীড়ের একাকীত্ব দূর করায়
সচেস্ট থাকা কবিতা দিনে দিনে
নিঃস্বঙ্গতার আড়ালে ঢেকে যেতে
চলেছে। বুঝাতে ব্যর্থ নীড়কে সে।
খুনসুটি অধিকার ছোট ছোট আবদার
গুলো কখন যেন অভিমানে জমাট
বাঁধতে শুরু করে কবিতা নিজেও বুঝতে
পারে না। নীড়ের অনুপস্থিতির সমূদ্রে
ক্রমশঃ ডুবে যাচ্ছে।
,
কবিতার অভিমান আর নীড়কে আঁকড়ে
রাখার বড্ড ছেলেমানুষিগুলো নীড়ের
বিরক্তিতে রুপ নেয়।দিন শেষে
ক্লান্ত পরিশ্রান্ত নীড়ের কবিতার
অভিমানগুলোকে অসহ্যকর লাগতে শুরু
করে। অভিমান ভাঙানোর
প্রয়োজনটাও আর আগের মত অনুভব
করে না যেন।
.
নিস্বঙ্গ কবিতা ফোনের এপাশে
নীড়ের অপেক্ষায় থেকে ব্যর্থ হয়।
রাতগুলো বড় বেশি ভারী হয়ে ওঠে।
আবার নিজেকে এই ভেবে স্বান্তনা
দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করে যে,
'এমনটাতো হওয়ারই ছিলো। কেউই
কারো সার্বিকভাবে হতে পারবে না।
প্রতিবন্ধকতা নীড়ের থেকে কবিতারই
যে বেশি। কবিতার ইচ্ছে করলেই
শৃংখলমুক্ত হতে পারে না। '
এভাবনাগুলো কবিতাকে কুড়ে কুড়ে
খায়। যার সাক্ষী রাতগুলো আর
ক্লান্ত ভোরগুলো। ।
,
অভিমান কেউ ভাঙাবেনা জেনেও
অভিমান করে কষ্টে থাকা কবিতা
সারাদিন শেষে অনেকটা নিরুপায়
হয়েই ফোন দেয় নীড়কে।
-হুম বলো।
-এমন করো কেন আমার সাথে ? আমার
ভালো লাগে না তোমাকে ছাড়া।
- ব্যস্ত ছিলাম।
-তাই বলে সারা দিনে একবারো---
-তো কি সারাদিন ফোনে কথাই
বলবো। ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতে
হবে??
-চুপ হয়ে যায় কবিতা । নীরবতা আষ্ঠে
পৃষ্ঠে বেধে নেয় যেন।
-তুমি এমন কেন করো ?(কান্না
লুকোতে না পেরে বললো কবিতা)
- আমি এমনই । এমনই আমি। জন্ম থেকেই
এমন। বুঝেছো? নীড় ফোন কেটে দেয়।
কবিতার অভিমান বিষের মত
লাগছিলো নীড়ের। কদিন থেকে খুব
টেনশন আর কাজের চাপও ছিলো যা
নীড়ের মানষিক অবস্থাকে বিষিয়ে
রেখেছে। নানান কারনে সুযোগ হয়নি
কবিতাকে জানানো।
এদিকে নীড়ের রুঢ় আচরণ কবিতার
মনটাকে ভেঙে গুড়িয়ে দেয় ।কান্না
যেন আর বাধ মানছে না কিছুতেই।
কষ্টের অতল সমূদ্র তাকে অনেক
গভীরে টেনে নিচ্ছে। সেখান থেকে
কেউ তাকে টেনে তুলবে না। বুকে
নেবে না। সময় বড় বেশি নির্মম।
দিন শেষে রাত আসে কিন্তু কবিতা
নীড়ে চাঁদ ওঠেনা।রাত শেষে আবারো
দিন আসে কিন্তু কবিতা নীড়ে সূর্য
ওঠেনা।
,
আমরা কিছু মানুষের কাছে সময়
কাটানোর তুচ্ছ উপলক্ষ মাত্র!
মাঝেমাঝে নিজেকে খড়কুটো মনে
হয়।
অথচ আমাদের পুরোটা সময় তাদের
নামে!
কবিতা বুঝলো এবার তার ফেরার
পালা। সে তার তিল তিল করে গড়ে
তোলা ভালোবাসাকে আর অপমানিত
হতে দেবে না।
কিছু সম্পর্ক বাঁচিয়ে রাখতেই অসময়ে
ইতি টানতে হয়। ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ
এবং ভালোবাসাটুকু শেষ হওয়ার
আগেই সম্পর্ক শেষ করতে হয়।
,
পরদিন কবিতার একটি লেখা পায়
নীড়। ফোনটা বন্ধ রাখার কারনে
পরদিনই লেখাটা পেতে হলো নীড়কে।
"" 'তুমি কিভাবে সবসময় আমার হৃদয়
জিতে নিতে তোমার একটু ভালবাসার
ছোঁয়া দিয়ে?? কিভাবে??
কিন্তু তুমি আর আমার নেই।
শুনেছিলাম, কখনও, কোনদিন, যদি খুব
কষ্টকর কিছু হয় তাহলে সেটা ভুলে
থাকার একমাত্র উপায় মনে করা সেটা
কখনও হয়নি। ঠিক ই শুনেছিলাম মনে
হয়। কারন আমি চাইনা কিছু আমার
মনে থাকুক। একটা জিনিশ যেটা
আমার মনে আছে এখনও --- তুমি
বলেছিলে ,,,,' তুমি আছো বলে শত
প্রবলেমের মাঝেও টেনশন ফ্রী
থাকতে পারি, নিশ্চিন্ত মনে ঘুমাতে
পারি'।কত রাত জেগে অপেক্ষা করেছ
আমার সাথে একটু কথা বলার জন্য,
একা বাসায় ঘুমাতে ভয় পাবো ভেবে
নিজে ঘুমাওনি একটুও। আজ আমি তুমি
ছাড়া খুব একা। কত নির্ঘুম রাত কাটাই
তোমার তা ভাবারও সময় নেই ।
আমি দুঃখিত। কখনও কখনও আমি
তোমাকে সত্যি অনেক কষ্ট
দিয়েছিলাম। অনক সময় কিছু অন্যায়
আবদারও করেছিলাম। কিন্তু কখনই
সেটা আমার উদ্দেশ্য ছিলনা। আমার
জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অংশ ছিলে
তুমি। তোমার সাথে কাটানো
প্রতিদিন আমার কাছে ছিল নতুন এর
মত। It was like everyday is a new
beginning when I am with you. তুমি
আমাকে ভালবাসতে শিখিয়েছিলে।
আমার কানে এখনও সেই কথা ভাসে ‘
তুমি আছো বলেই অনেক কষ্টেও
হাসতে পারি ।' তোমার খুব সুন্দর
একটা মন আছে যা তোমাকে নিয়ে
যাবে অনেক উপরে, হিমালায় কে
ছারিয়ে।কখনও ভয় পেওনা স্বপ্ন
দেখতে এবং বাঁচতে।।
তুমি কিভাবে জেনেছিলে?? কিভাবে
বুঝেছিলে আমার মনের সুপ্ত
আমিকে??
তোমাকে আমি কখনও ভুলবো না।
কখনও সম্ভব ও না। তোমাকে
ভালবেসেছিলাম, ভালোবাসি,
ভালবাসবো। সুনিদ্রায় শায়িত থাকো
তুমি। সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ
উপহার তুমি-আমার জন্য।
। __
এরপর নীড় আর কবিতাকে কোথাও
পেল না। নীড় এটুকু জানে এবং
বিশ্বাস করে নীড়কে ছেড়ে কবিতা
ভালো নেই । কখনো ভালো থাকতে
পারে না। কবিতার ভালো থাকার
নিশ্চয়তা যে একমাত্র নীড়ের কাছেই
বন্ধক রাখা। কিন্তু কোথায় পাবে
কবিতাকে । সেতো তাকে পাবার সব
পথ বন্ধ করে দিয়েছে। নীড় যে তার
কাছে ওয়াদা বদ্ধ তাই কাউকে
নিজের জীবনের সাথে জড়াতে
পারেনা আজও। রোজ দিনের শুরুতে
খাবার আগে আর দিন শেষে
কবিতাকে ফোন দেয় নীড় । যদি ভুল
করেও কখনো কবিতাকে পেয়ে যায়।
অনেক কিছু বলা হয়নি মেয়েটাকে।
এতদিনের সব হিসাব তাকে দিতেই
হবে যে। কবিতাকে হারিয়ে বুঝেছে
সে তার জীবনে কবিতার উপস্থিতি
কতটা জুড়ে। নীরের অধৈর্য অবহেলা
আর কবিতার অভিমান দুজনকে
আলাদা করে দিলেও মনটা সেই একই
জায়গায় পড়ে রইলো দুজনেরই।
_লেখা_গোধূলী স্বপ