Thursday, October 18, 2018

যুগের এইকাল/সেকাল। হারিয়ে যাওয়া অতীত Past Vs Present

Kodak কোম্পানিকে মনে আছে?
১৯৯৮ সালে কোড্যাক কোম্পানিতে প্রায় ১লক্ষ ৭০ হাজার কর্মচারী কাজ করতেন।
এবং বিশ্বে ছবি তোলার প্রায় ৮৫% ই কোড্যাক ক্যামেরায় তোলা হত। গত কয়েক বছরে মোবাইল ক্যামেরার বাড়বাড়ন্ত হওয়ায় এমন অবস্থা হয় যে Kodak ক্যামেরার কোম্পানীটাই উঠে যায়। এমনকি Kodak সম্পুর্ন দেউলিয়া হয়ে পড়ে এবং এদের সমস্ত কর্মচারীকে বাধ্যতামূলক ছাঁটাই করা হয়।
ওই একই সময়ে আরো কতগুলি বিখ্যাত কোম্পানি তাদের ঝাঁপ পাকাপাকি বন্ধ করতে বাধ্য হয়।
যেমন-
HMT (ঘড়ি)
BAJAJ (স্কুটার)
DYANORA (TV)
MURPHY (Radio)
NOKIA (Mobile)
RAJDOOT (Bike)
AMBASSADOR (গাড়ি)
এই উপরের কোম্পানিগুলোর মধ্যে কারুরই কোয়ালিটি খারাপ ছিল না। তবুও এই কোম্পানিগুলো উঠে গেল কেন? কারণ এরা সময়ের সাথে নিজেকে বদলাতে পারেনি।
এখনকার সময়ে দাঁড়িয়ে আপনি হয়তো ভাবতেও পারছেন না যে সামনের 10 বছরে দুনিয়া কতটা পাল্টে যেতে পারে! এবং আজকের 70%-90% চাকরিই সামনের 10 বছরে সম্পুর্নভাবে বিলুপ্ত হতে চলেছে। আমরা ধীরে ধীরে ঢুকে পড়েছি "চতুর্থ শিল্প বিপ্লব"-এর যুগে।
আজকের বিখ্যাত কোম্পানিগুলোর দিকে তাকান-
উবার কেবলমাত্র একটি Software-এর নাম।
না, এদের নিজস্ব কোন গাড়ি নেই। তবু আজ বিশ্বের বৃহত্তম ট্যাক্সি ভাড়ার কোম্পানি হল উবার।
Airbnb হল আজকে দুনিয়ার সবথেকে বড় হোটেল কোম্পানি। কিন্তু মজার ব্যাপার হল, পৃথিবীর একটি হোটেলও তাদের মালিকানায় নেই।
একইভাবে Paytm, ওলা ক্যাব, Oyo Rooms ইত্যাদি অসংখ্য কোম্পানির উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে।
আজকে আমেরিকায় নতুন উকিলদের জন্য কোন কাজ নেই, কারণ IBM Watson নামে একটি আইনি Software যে কোন নতুন উকিলের থেকে অনেক ভাল ওকালতি করতে পারে। এইভাবে পরের 10 বছরে প্রায় 90% আমেরিকানদের আর কোন চাকরি থাকবে না। বেঁচে থাকবে খালি বাকি 10%। এই 10% হবে বিশেষ বিশেষজ্ঞ।
নতুন ডাক্তারদেরও চাকরি যেতে বসেছে। Watson নামের Software মানুষের থেকেও 4 গুন নিখুঁত ভাবে ক্যানসার এবং অন্যান্য রোগ শনাক্ত করতে পারে। 2030 সালের মধ্যে কম্পিউটারের বুদ্ধি মানুষের বুদ্ধিকে ছাপিয়ে যাবে।
2019 সালের মধ্যেই রাস্তায় নামতে চলেছে চালকহীন গাড়ি। 2020 সালের মধ্যেই এই একটা আবিষ্কার বদলে দিতে পারে গোটা দুনিয়ার চালচিত্র। এর ফলে সামনের 10 বছরে আজকের 90% গাড়িই আর রাস্তায় দেখা যাবে না। বেঁচে থাকা গাড়িগুলো হয় ইলেক্ট্রিকে চলবে অথবা হাইব্রিড গাড়ি হবে। রাস্তাগুলো ক্রমশঃ ফাঁকা হতে থাকবে। পেট্রোলের ব্যবহার কমবে এবং পেট্রোল উৎপাদনকারী আরব দেশগুলি ক্রমশঃ দেউলিয়া হয়ে আসবে।
তখন গাড়ি লাগলে, উবারের মত কোন Software-এর কাছেই গাড়ি চাইতে হবে। আর গাড়ি চাইবার কিছুক্ষনের মধ্যেই সম্পুর্ন চালক-বিহীন একটা গাড়ি আপনার দরজার সামনে এসে দাঁড়াবে। আপনি যদি অনেকের সাথে ওই একই গাড়িতে যাত্রা করেন, তাহলে মাথাপিছু গাড়িভাড়া বাইকের থেকেও কম হবে।
গাড়িগুলো চালকবিহীন হবার ফলে 99% দুর্ঘটনা কমে যাবে। এবং সেই কারণেই গাড়ি বীমা করানো বন্ধ হবে এবং গাড়ি-বিমার কোম্পানি গুলো সব উঠে যাবে।
গাড়ি চালানোর মত কাজগুলো আর পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে না। 90% গাড়িই যখন রাস্তা থেকে উধাও হয়ে যাবে, তখন ট্রাফিক পুলিশ এবং পার্কিং-এর কর্মীদেরও কোন প্রয়োজন থাকবে না।
ভেবে দেখুন, আজ থেকে 5-10 বছর আগেও রাস্তার মোড়ে মোড়ে STD বুথ ছিল। দেশে মোবাইল বিপ্লব আসার পর, এই সবকটা STD বুথই কিন্তু পাততাড়ি গুটাতে বাধ্য হল। যেগুলো টিকে রইল, তারা মোবাইল রিচার্জের দোকান হয়ে গেল। এরপর মোবাইল রিচার্জেও অনলাইন বিপ্লব এল। ঘরে বসেই অনলাইনে লোকে মোবাইল রিচার্জ করা শুরু করল। এই রিচার্জের দোকান গুলোকে তখন আবার বদল আনতে হল। এরা এখন কেবল মোবাইল ফোন কেনা-বেচা এবং সারাইয়ের দোকান হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সেটাও বদলাবে খুব শিগগিরই। Amazon, Flipkart থেকে সরাসরি মোবাইল ফোন বিক্রি বাড়ছে।
টাকার সংজ্ঞাও পাল্টাচ্ছে। একসময়ের নগদ টাকা আজকের যুগে "প্লাস্টিক টাকায়" পরিণত হয়েছে। ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ডের যুগ ছিল কদিন আগেও। এখন সেটাও বদলে গিয়ে হয়ে যাচ্ছে মোবাইল ওয়ালেট-এর যুগ। Paytm-এর রমরমা বাজার, মোবাইলের এক টিপে টাকা এপার-ওপার।
যারা যুগের সাথে বদলাতে পারে না, যুগ তাদের পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়। তাই ক্রমাগত যুগের সাথে বদলাতে থাকুন।
সাফল্যকে সাথে রাখুন, সময়ের সাথে থাকুন।

Saturday, September 08, 2018

আহা প্রেমিক বেচারা ! Memorable Love Story

একজন পুরুষ যতটা সুদর্শন হলে কোন রমণীর ভাবনার জগৎটা যুদ্ধবিগ্রহ ছাড়াই দখল করা নিতে পারে ঠিক ততটাই সুদর্শন ছিল পরেশ ।জোড়া ভ্রু,ইয়া বড় চোখ,ঠান্ডা মেজাজ,চওড়া বুক আর খোঁচা খোঁচা দাড়িতে স্মীত হাসি দিয়ে যেকোন রমণীকে সহজেই ঘায়েল করতে পারত পরেশ ।দিদির সাথে সাড়ে তিন বছরের ভালবাসাবাসির সম্পর্ক ছিল আর এখন তো সারাজীবনের জন্য ! পরেশ দিদিকে যে চিঠি লিখছে সবগুলোই আমার পড়া ,আমি লুকিয়ে লুকিয়ে পরেশের দেয়া চিঠিগুলো পড়ে নিতাম ।দিদির কাছে চিঠি পৌছাবার একমাত্র বিশ্বস্ত মাধ্যম আমিই ছিলাম ,পরেশ আমার বা হাতের মুঠোয় চিঠি গুজে দিত আর ডান হাতে টকঝাল লজেন্স ।দিদির পাশে শুয়ে আমি লজেন্সের প্রাণটা একবারে শুষে নিতাম আর দিদি নিত পরেশের চিঠির শব্দব্রহ্মান্ডে লুকোনো অনূভূতিগুলোকে ।এমন সময় গিয়েছে যে মাঝ রাতে পরেশের ফিসফিসানি ডাকে আমার ঘুম ভেঙে গেছে ,মেজাজ বিগড়ে তখন চোখ পাকিয়ে বলতাম-পরেশ দা এত রাতে ঘুম না ভাঙালে হত না? পরেশ হাসিহাসি মুখ করে বলত - শ্যালিকা এই কান ধরলাম আর এমন হবেনা ,অর্পাকে একটু ডেকে দাওনা ।দিদি বেহুশ হয়ে ঘুমাতো ! অনেক ডাকাডাকি করে ঘুম ভাঙিয়ে আমি শুয়ে পড়তাম ।পরেশ জানালার বাইরে থেকে দিদির হাত ধরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সারা রাত গল্প করে কাটিয়ে দিত! পরেশ কোনদিন কথা রেখেনি ,দেখা যেত পরেরদিন মাঝ রাতে এসে সে আবার ফিসফিসিয়ে ডাকাডাকি শুরু করে দিয়েছে! আমি চোখ পাকিয়ে মেজাজ দেখালে সে হাসিহাসি মুখ করে জিহ্বা কামড়ে বলত "শ্যালিকা কান ধরলাম আর করব না এমন" ।আসলে তার হাসিহাসি মুখ দেখে কোন আবেদন উপেক্ষা করার শক্তি ঈশ্বর আমাকে দেননি ।
দিদি পড়ত কলেজে আর আমি মেট্রিক দিব তখনই দিদির সাথে ভাব ভালবাসা হয় পরেশের ।একই সাথে দু বোন স্কুল কলেজে যেতাম ,ফেরার পথে পরেশও থাকত আমাদের সাথে ।পরেশ আর দিদি মন্দিরের পেছনের বটগাছটার নিচে বসে পড়ত আর পাহারা দিতে হত আমাকে ।স্কুল থেকে ফেরার পথে বা স্কুল ফাঁকি দিয়ে দু বোনকে নিয়ে মেলায় যেত পরেশ ।দিদিকে এক গোছা কাচের চুড়ি দিলে আমাকে দিত দুই গোছা! দিদি বাড়ি এসে গাল ফুলিয়ে বলত -দেখ তোকে সবকিছু বেশি বেশি দিয়েছে ,আমাকে সবসময় ই কম কম ।দিদি যে তখন মিথ্যে মিথ্যে অভিমানের খেলা খেলত সেটা দুজনেই বুঝেও অবুঝ থাকতাম ,কেননা এতে অন্যরকম প্রশান্তি দুজনেই পেতাম যে ।

একবার হল কী ,দিদির সারা গায়ে পক্স উঠল! মা এসে দু বোনের বিছানা আলাদা করে দিয়ে বললেন - দু বোনের একসাথে পক্স উঠলে সে ঠেলা আমি সইতে পারব না ।আমিও ভয়ে ভয়ে একটু দূরে সরে থাকতে লাগলাম ।এর মাঝে স্কুল কলেজ যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল ,মাঝ রাতে পরেশ জানালার ওপাশ থেকে আমাকে বলল- সম্পা পিছনের দরজাটা একটু খুলে দাওনা আমি একটু দেখেই চলে যাব ,দিদি তখন ঘুমে থাকায় আমি অনেক্ষন সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগার পরে পরেশের অনুরোধের কাছে হেরে গিয়ে দরজা খুলে দিয়েছিলাম ।পরেশ ঘরে ঢুকেই দিদির পক্স ওঠা কপালে চুমু খেল! হাতে ওঠা প্রতিটা পক্সে চুমু খেল! ভোর হবার আগ পর্যন্ত দিদির মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেল ।দিদি কিছু টের পায়নি ,সকালে দিদিকে রাতের ঘটনা খুলে বলার পর দিদি মুচকি মুচকি হাসির সাথে কয়েকফোটা অশ্রু ফেলেছিল! এর আগে কখনো আনন্দ অশ্রু দেখিনি ,সেদিন ই প্রথম দেখেছিলাম।
পরেশের দেয়া চিঠি পড়ে পরেশের ভেতরে থাকা মানুষটার প্রতি সম্মান বেড়ে যায় ,সেই সাথে মুগ্ধ হয়ে যায় ।একটা মানুষ এত সুন্দর করে ভালবাসতে পারে কী করে! পরেশের প্রতি কেন যেন অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করত ,পরক্ষণে যখনই দিদির কথা মনে পড়ত তখনই নিজের অবচেতন মনের আকাঙ্ক্ষার কবর দিতাম ।
পরেশের সাথে একবার কী একটা নিয়ে দিদির খুব ঝগড়া হয়েছিল ,আসলে ঝগড়াটা দিদিই বাধিয়েছিল ।পরেশ চুপ করে শুধু শুনেছিল ।দিদি খুব শক্ত মনের আমার মত গলে যাওয়া টাইপ না ,পরেশের সাথে দু রাত কথা বলেনি! পরেশ জানালার পাশে এসে সারা রাত দাঁড়িয়ে ছিল! আমার বেচারার জন্য খুব মায়া হত ।তৃতীয়দিনের মাথায় দিদির অভিমান ভাঙাতে পরেশ দানাদার,পকেটে করে বকুল ফুল আর এক টুকরো কাগজ এনেছিল কয়েক লাইনের কবিতা ছিল তাতে
অভিমানে অভিমানে বজ্রপাত! ভালবাসা মুখ থুবড়ে ভালবাসা খোঁজে।
কবেকার কোন অনুরাগে এতটা দূরত্ব! বৈরাগ্যর জীবন আমায় শুষে খায় প্রিয়তমার গালের টোলে অভিমান বাসা বেধে শহর পুড়ে ছাই! আহা প্রেমিক বেচারা! আহা প্রেমিক বেচারা!
মাঝ রাতে প্রমিক বেচারার শরীর ছুঁয়ে থার্মোমিটার গলে,কাশির শব্দে রক্ত গড়িয়ে পড়ে! প্রণয়িনীর একটু ডাকের অপেক্ষায় প্রেমিক আশায় বুক বাধে, ও পাশ থেকে কেউ বলুক "শরীর কী খুবই খারাপ?" আফসোস কর্পোরেটের এই যুগ অনূভুতি থেকে ছুটে পালায়! আহা প্রেমিক বেচারা ! আহা প্রেমিক বেচারা!
দিদির হাতে কাগজটা দিয়েছিলাম ,দিদি কি ভবে যেন সেটা হাত বাড়িয়ে নিয়ে পড়তে শুরু করেছিল । কবিতা পড়ার শেষে দিদির চোখে পানি টলমল করছিল ,দরজা খুলেই পরেশের কাছে গিয়ে আচমকা জড়িয়ে ধরে বলে- এত জ্বর নিয়েও আমায় দেখতে চলে এলে! দুজন দুজনকে জাপ্টে ধরে সেদিন সে কী কান্না! এই কান্না যে সেদিন কাল হয়েছিল তাদের জন্য!
বাবার কাছে সেদিন ধরা পড়ে গিয়েছিল দুজন ।বাবা আমাকে মেরেছিলেন সেদিন ,মা ও আমাকে মেরেছিলেন ।দিদিকে ,পরেশকে কাওকে কিচ্ছু বলেননি ।এর মাঝে কত কী হয়ে গেল! মা আল্টিমেটাম দিলেন তিনি উঠানের আম গাছে গলায় দড়ি দিয়ে মরবেন যেদিন শুনবেন দিদি পরেশের সাথে আর একটা কথা বলেছে! বাবাও জানিয়ে দিলেন- দিদির যা ইচ্ছা করুক ,তবে তার কথা না শুনলে তিনি কলকাতা চলে যাবেন ।আর কখনো কাউকে মুখ দেখাবেন না।পরেশের বাবাও পরেশকে ব্যবসার কাজে দিনাজপুর পাঠিয়ে দিলেন ।এর মাঝে দিদির বিয়ে হয়ে গেল জগন্নাথ পাড়ায় পরেশের সাথে কোনরকম যোগোযোগের জো ছিল না তখন ।দিদি হাউমাউ করে বাবার পায়ে ধরে ,মায়ের পায়ে ধরে কেঁদেও কোন ফল পায়নি ।চেনা বাবা মা সেদিন অনেক অচেনা হয়ে গিয়েছিল ।
বিয়ের তেরোদিন পর পরেশ আমাদের বাড়িতে এসে সে কী কান্না! উঠানের কোনায় বসে পড়েছিল ঝিয়ের কাছ থেকে দিদির বিয়ের খবর পেয়ে ।আমার সেদিন সাহস হয়নি পরেশকে শান্ত্বনা দেওয়ার ।বাবা পরেশের বাবাকে খবর দিলে তারা এসে নিয়ে যায় পরেশকে ।এর মাঝে দিদিকে একবার দেখতে গিয়েছিলাম ,দিদি আমাদের কারো সাথে কোন কথা বলেনি সেদিন ।এরপর টানা সাতটা মাস ধরে পরেশের দেখা পায়নি ,দিদিও আসেনি আমাদের বাড়িতে। বাবা আনতে গেলেও সে আসেনি ,মা বাবা পায়ে ধরতে বাকি রেখেছিল তবুও দিদি আসেনি ।
বছরখানেক পর পরেশের সাথে দেখা হয়েছিল শ্যামগঞ্জে ।একটা সবুজ ফতুয়া পরেছিল সেদিন ,বিদ্যুতের মোটা তারের উপর বসে থাকা কাকগুলোর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল সে ।কাছে যাবার সাহস হয়নি আমার ।ভ্যানে করে আই.এ পরীক্ষার হলের দিকে যাচ্ছিলাম ।লোকের মুখে শুনেছি পরেশ এক জায়গায়া থাকেনা ,বাড়িতেও যায়না ।এদিকসেদিক ঘুরে বেড়ায় ।বিএতে ভাল রেজাল্ট আছে ,ভাল চাকরীর সুযোগ থাকলেও করেনি পরেশ ! দিদিদের বাড়ির পাশে প্রথম প্রথম ঘুরঘুর করত তারপর আর নাকি সেদিকেও যায়নি সে ।
বাবা মারা গেছেন আজ চার মাস ,দিদি শশানে বাবাকে পোড়াতে এসেছিল ।মাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদেছে দিদি ।পরেশ বাবার শেষকৃত্যর সব ব্যবস্থা নিজে থেকেই করেছে ।দিদির দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়েছিল পরেশ ,দিদি তাকানোর সাহস পায়নি একবারের জন্যও ।দিন চারেক পর দিদিও চলে গেছে শ্বশুরবাড়ি। মা সারাদিন কাঁদেন ,আমিও কাঁদি বাবার চাদর জড়িয়ে ধরি কাঁদি ,বাবার চেয়ারটা দেখে কাঁদি । বাড়ির বাজার করা থেকে সবটায় পরেশ করে দেয় ।পরেশ পাড়ার হাই স্কুলে শিক্ষক হিসেবে জয়েন করেছে এর মাঝে ।পরেশ এতদিনেও দিদিকে ভুলতে পারেনি ,দিদির ঘরের দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে থাকে ।দিদির নামটা কারো মুখে শুনলেই তার দিকে তাকিয়ে থাকে ।মা আর পরেশ দুজনের তাকানোর ধরনটা একইরকম ,দুজনের ভেতরটাই প্রিয়জন হারানোর এক সমুদ্দুর শূন্যতা ভর করে থাকে ।
একদিন সন্ধ্যাবেলা পরেশের মা বাবা এসে আমাদের বাড়ি হাজির।আমার সাথে পরেশের বিয়ে ঠিক করল আমার মায়ের সাথে আলাপ করে । পরদিন সন্ধ্যায় হাট থেকে ফেরার পরে পরেশকে ছাদে পেয়ে বলেছিলাম - পরেশ দা তুমি আমার সাথে সংসার করতে পারবে তো? তুমি মন থেকে আমার কাছে আসতে পারবে তো? পরেশ অন্যদিকে মুখটা ঘুরিয়ে বলেছিল- অর্পার চোখের নিচের কালো দাগটা দেখেছো সম্পা? কত রাত ও নির্ঘুম কাটিয়েছে সে হিসেব ওর চোখের দিকে তাকালেই বোঝা যায় ।আমি সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে ভেবেছিলাম মাকে গিয়ে বলব এই বিয়ে ভেঙে দিতে ।কোন এক অজানা কারনে সেটা বলার সাহস হয়ে ওঠেনি সেদিন ।তখন মনে মনে জেদ করেছিলাম "দিদির চেয়েও পরেশকে বেশি ভালবাসব আমি ,আস্তে আস্তে ঠিক করে নিব " ।
বিয়ে হয়ে গেল ছয়মাস ।পরেশ একটুও বদলায়নি ,আমি যখন বিছানায় তার দিকে ফিরে তাকে জড়িয়ে ধরি তখন সে বলে "অর্পার গায়ের গন্ধটা এখনো পায় জানো তো ,অর্পা হাওয়াই মিঠাইয়ের মত আমার সাথে নিজেকে মিশিয়ে নিত" ।আমার তখন নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়া ছাড়া কোন উপায় থাকত না ,নিজের দিদির প্রতি নিজের ই তখন হিংসে হত ,একটা মেয়ে কতটা কপাল নিয়ে জন্মালে এমন ভালবাসা পেতে পারে যে কিনা পাবেনা জেনেও এখনো তাকেই ভালবাসে! ছাদে শাড়ি নাড়ার সময় চোখ বুজে কল্পনা করতাম পরেশ পেছন থেকে এসে আমার আধখোলা কোমরটা দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে আমার ঘাড়ে নাক ঘষে ঘষে আমায় লাল করে দিচ্ছে কিন্তু এমনটা শুধু কল্পনাতেই হত ।পরেশ আমার থেকে একটা দূরত্ব রেখে চলত সব সময়ই ।অনেক অনুনয় করেও দু লাইন কবিতা শোনার সৌভাগ্য হয়নি আমার আর সেখানে ঘনিষ্ঠতা, আদর সোহাগ তো মেলা দূরের ব্যাপার৷
গতকাল দিদি বাড়ি চলে এসেছে । দিদি নাকি বাজা! কোনদিন নাকি তার বাচ্চা হবেনা ,ডিভোর্স হয়ে গেছে নাকি দেড়মাস আগেই! আমরা কেউ কিছুই জানতাম না।এর মাঝে জামাই বাবু নাকি আরেকটা বিয়েও করে নিয়েছে! অপমানের মাত্রা সহ্য করতে না পেরে গতকাল চলে এসেছে ।দিদির অসহায় অবস্থা চিন্তা করে যতটা না খারাপ লাগছে তার চেয়ে বেশি ভয় হচ্ছে আমার! এ ভয় অন্তর্দহনের ভয় ,পেয়েও হারাবার ভয় ।
পরেশ ইদানীং ঘনঘন আমাদের বাড়িতে যাচ্ছে ,দিদি পরেশকে নিষেধ করার পরেও সে যাচ্ছে ।এমনটাই বলেছে মা ।পরেশকে কিছু বলার মত অধিকার কাগজে কলমে আমার থাকলে ,আত্নিক কোন অধিকার নেই ।আমি তো তার কাগজে বউ শুধু মাত্র এছাড়া আর কিছু না ।কোন জোরে তাকে মানা করব? আর মেয়েটা তো অন্য কেউনা ! আমার দিদি,পরেশের ভালবাসার মানুষ ।পরেশ কোনদিন আমার গায়ের গন্ধ খোঁজেনি ,আমার চোখের নিচে জমতে থাকা কালো দাগ নিয়ে উদ্বেগ দেখায়নি ।যা ছিল সবটাই দিদির জন্য।কোন কমিটমেন্ট দেয়নি সে আমাকে ,তাহলে কোন অধিকারে ,কিসের জোরে আটকাবো তাকে আমি!
অনেক রাত হল পরেশ বাড়ি ফেরেনি ।ইদানীং অনেক রাত করে ফেরে সে ,দিদি ঘরের দরজা আটকে শুয়ে থাকে আর সে বাইরে বসে থাকে! হ্যারিকেনটা নিয়ে আমাদের বাড়িতে চলে আসলাম ।দিদির ঘরের দরজাটা একটু ফাঁক করে রাখা ,জানালার পাশে সরে আসলাম ।ভেতর থেকে দিদির গলায় স্পষ্ট শুনতে পেলাম "এ সম্ভব না পরেশ ,আমাকে মেরে ফেলো তবুও আমার বোনের সংসারটা ভেঙোনা" জানালা দিয়ে দেখলাম পরেশ দিদির কোমরটা তার দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বুকের সাথে জাপ্টে ধরে আছে ,দিদি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে ।হ্যারিকেনের উষ্ণ কাচে আঙুল পোড়া দাগটা বোঝা যাবে কাল দিনের আলোয় তবে মনের পোড়া দাগ! সে কী দেখা যাবে?
দিদির জীবনে কাউকে খুব করে দরকার যে আমার বাজা দিদিকে শর্তহীনভাবে ভালবেসে যাবে শেষ বয়সে এসেও ।আমার মা টাকেও যে দেখবে এমন কাউকে দরকার দুজনের জীবনে ।ডিভোর্স পেপারটা টেবিলের উপর রেখে বেরিয়ে আসলাম ।কলকাতা গিয়ে কিছু একটা করে নিব নিজের জন্য ,একটা মানুষের বদলে তিনটে মানুষ ভাল থাকলে ভগবানে খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যাবেনা।জীবনে হয়ত অন্য কারো বুকে মাঝ রাত্তিরে নাক ঘষে লাল করব ,হয়তোবা করবোনা ।নরম বুক জুড়ে হয়তো আমার বাচ্চাটার আলতো কামড়ের স্পর্শ পেয়ে সারাজীবন কাটিয়ে দিব ,হয়তোবা না ।তবুও যে আমার জীবনে দুটো অপশন থেকে যায় ,কিন্তু আমার দিদির জীবনে যে আর কোন অপশন ছিল না ।
লেখাঃ Borhan uddin

Friday, July 20, 2018

ক্রোয়েশীয় প্রেসিডেন্টের ‘সুন্দর’ মুখের আড়ালে.. Croatia Beautiful President Kolinda Grabar-Kitarović is a ...

বিশ্বকাপ ফুটবলের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশি দর্শকদের বিরাট অংশ হঠাৎ ক্রোয়েশিয়ার সমর্থক বনে যায়। এতে দলটির লড়াকু মনোভাব যেমন প্রভাব রেখেছে, তেমনি দেশটির সুদর্শনা প্রেসিডেন্টের হাসিমাখা মুখচ্ছবিরও জাদু ছিল। অনেক নষ্ট প্রচারমাধ্যম তাঁর ভুয়া অর্ধনগ্ন ছবিও প্রকাশ করেছে নিজেদের কাটতি বাড়াতে এবং হয়তো–বা তরুণদের ক্রোয়েশিয়ামুখী করতে। কিন্তু কে এই কোলিন্দা গ্রাবার-কিতারোবিচ? বাংলাদেশি প্রচারমাধ্যম এবং ফুটবলপ্রেমীরা কতটা জানেন তাঁর অতীত? সামান্য কিছু আলোচনা হোক।
দুই.
২০১৫ থেকে ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এই রাজনীতিবিদ ছিলেন মূলত একজন কূটনীতিবিদ। ন্যাটোতে গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। কিছু দিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্রোয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূতও ছিলেন। দেশটির দক্ষিণপন্থী ক্রোয়েশিয়া ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের (‘এইচডিজেড’ নামে পরিচিত) সদস্য তিনি। এইচডিজেড গড়েছিলেন কমিউনিস্ট যুগোস্লাভিয়া ভাঙার অন্যতম কারিগর ফ্রানজো ট্রডাম্যান। যে কারণে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের খুব প্রিয় ছিলেন তিনি। সেই এইচডিজেডের আজকের নেতা হলেন কোলিন্দা। কিন্তু এইচডিজেডের ভাবাদর্শের রয়েছে কুৎসিত এক অতীত।
নিচে একটা পতাকা হাতে কোলিন্দা গ্রাবারের ছবি রয়েছে।
প্রায় হুবহু ক্রোয়েশিয়ার পতাকার মতো হলেও এটা আসলে তা নয়। তবে আজকের ক্রোয়েশিয়ার পতাকা অতীতের এই পতাকার ঐতিহ্যেরই ফসল। কোলিন্দার হাতের পতাকার মতো আরেকটি পতাকা নিয়ে ইউরোপে গণহত্যাকারী নাজি বাহিনীর সমর্থক ক্রোয়েটদের ১৯৪১ সালের মিছিল দেখুন পরের ছবিতে।
আজকের ফুটবলপ্রেমী কোলিন্দা গ্রাবার যে এইচডিজেড দল করেন, সেটা সে দেশের ফ্যাসিবাদী ‘উসতাসা’ আন্দোলনের বর্তমান উত্তরাধিকারী। ১৯২৯ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত এরাই হাজার হাজার ভিন্নমতাবলম্বীকে হত্যা করেছিল। ক্রোয়েট ‘বিশুদ্ধতা’ রক্ষা করতে ‘উসতাসা’ সদস্যরা গণহত্যাকেও সমর্থন করত। যে গণহত্যার টার্গেট ছিল যুগোস্লাভিয়ার সার্ব, ইহুদি, মুসলমান এবং রোমা জিপসিরা। ১৯৪১-৪৫ সময়ে এরা হিটলার ও নাজিদের অন্যতম সহযোগী ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানি ও ইতালির যুদ্ধজোটেও ছিল তারা। হিটলারের বাহিনী যুগোস্লাভিয়ার ওই অঞ্চল দখল করে ১৯৪১-এর ১০ এপ্রিল তাদের ক্রোয়েট সহযোগীদের একটি সরকার গড়ে দিয়েছিল, তা চার বছর স্থায়ী হয়। আজকের ক্রোয়েট ফুটবল উত্তেজনায় মিশে আছে সেই রক্তাক্ত অতীত। এখনো ক্রোয়েট ফুটবল দর্শকেরা উত্তেজনার বশে স্লোগান দেয়: ‘ফর দ্য হোমল্যান্ড—রেডি!’ এটাই ছিল উসতাসা আন্দোলনের শপথ। রাজনৈতিক প্রয়োজনেই তাই গ্যালারি থেকে ড্রেসিংরুম পর্যন্ত কোলিন্দা গ্রাবারকে ফুটবল উত্তেজনায় থাকতে হয়েছে। প্রায়ই সুযোগ পেলে তিনি এও বলেন, মার্কো পারকোভিচের ভক্ত তিনি। ক্রোয়েট এই পপগানের শিল্পী ওই অঞ্চলে তরুণদের উগ্র জাতীয়তাবাদে আসক্ত করার ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন। সুইজারল্যান্ডসহ বিভিন্ন স্থানে তিনি নিষিদ্ধ।
এভাবেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন ফ্যাসিবাদী অতীত, ফুটবল এবং পপ মিউজিককে ব্যবহার করে কোলিন্দা এখন উগ্র ক্রোয়েট জাতীয়তাবাদের প্রতীক হয়ে উঠেছেন। গোপনে তাই তাঁকে অস্ট্রিয়া গিয়ে উসতাসা কর্মীদের একটি গোপন সমাধিক্ষেত্রও সফর করতে হয়েছিল একদা। বিশ্বকাপের স্টেডিয়ামে যাওয়ার মতোই ফ্যাসিবাদী সহযোদ্ধাদের সমাধিক্ষেত্রকে সম্মান জানানোও তাঁর রাজনীতির জন্য জরুরি ছিল।

তিন.
কোলিন্দাকে এ মুহূর্তে দক্ষিণপন্থী এক বিপ্লবেরই প্রতীক বলা যায় আর তাঁর বড় শক্তি ক্রোয়েট ফুটবল দর্শকদের একাংশ। ক্রোয়েট দর্শকরা আইনগত বাধ্যবাধকতা এড়াতে প্রায় স্টেডিয়ামে নাজিদের স্বস্তিকা চিহ্নসংবলিত পতাকা হাতে না নিয়ে স্বস্তিকার মতো করে গ্যালারিতে বসেন (চতুর্থ ছবি)।

ক্রোয়েট ফুটবলের এই উগ্র জাতীয়তাবাদীরা এবং ক্রোয়েট দশকদের বর্ণবাদী আচরণের জন্য ২০০৬-এ ইউরোপীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন দেশটিকে একদা বহিষ্কারেরও উদ্যোগ নিয়েছিল (পঞ্চম ছবি)। ২০০৪-এও একই অভিযোগে ক্রোয়েট ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনকে জরিমানা করা হয়।
চার
কোলিন্দা গ্রাবার সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য শেয়ার করে এই আলোচনা শেষ করছি—পাঠকেরা তাতে বাড়তি অনুসন্ধানের কিছু খোরাক পাবেন হয়তো। যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রদূত থাকাকালে স্বামী জ্যাকবকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবহার করতে দিয়ে ধরা পড়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে পদ ছেড়ে এরপর তিনি যোগ দেন ন্যাটো দপ্তরে। আফগানিস্তানে ন্যাটো বাহিনীর ইমেজ বৃদ্ধি এবং সৈনিকদের মনোবল বাড়ানোই ছিল তাঁর মূল দায়িত্ব (ষষ্ঠ ছবি)।
বলা বাহুল্য, আফগানিস্তানে পশ্চিমাদের আগ্রাসনে ক্রোয়েট সৈন্যরাও ছিল এবং আছে। ন্যাটোতে থাকাকালেই কোলিন্দা গ্রাবার যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা ব্যবসায়ী (রাজনীতিবিদ?) ডেভিড রকিফেলোর প্রতিষ্ঠিত ‘ট্রাইলেটারাল কমিশন’-এর সদস্য মনোনীত হন। আমেরিকার বৈশ্বিক প্রাধান্য (হেজিমনি) তৈরি এবং ৯/১১–পরবর্তী পরিস্থিতি সৃষ্টির অন্যতম কারিগর এই ‘ট্রাইলেটারাল কমিশন’। এ বিষয়ে অনেকেই নোয়াম চমস্কির (প্রফিট ওভার পিপল) আলোচনার হদিস জানেন হয়তো।
ন্যাটো এবং ‘ট্রাইলেটারাল কমিশন’-এ কাজের অভিজ্ঞতা কোলিন্দা গ্রাবারকে আমেরিকান এস্টাবলিশমেন্টের খুব কাছে নিয়ে এসেছিল। তারই ফসল তাঁর প্রেসিডেন্ট হওয়া। তবে সামাজিক গণতন্ত্রীদের (সোশ্যাল ডেমোক্রেট পার্টি) চেয়ে মাত্র ১ শতাংশ ভোট পেয়ে জিতেছিলেন তিনি। ব্যবধান আরও বাড়াতে এমুহূর্তে কোলিন্দা নিজেকে ইউরোপজুড়ে বেড়ে ওঠা উগ্র দক্ষিণপন্থী ঢেউয়ে নিজেকে শামিল করেছেন। ট্রাম্প ও পুতিন উভয়েরই ঘনিষ্ঠতা চাইছেন তিনি। টিম-ক্রোয়েশিয়াকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক জীবন দীর্ঘায়িত করতেও তিনি মরিয়া।
আলতাফ পারভেজ: দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস বিষয়ের গবেষক ও লেখক।

Friday, June 22, 2018

চোর || Thif

চোর
-------------------
*
গভীর রাত । ঘুম ভেঙে যায় নীরবের।
তুলিকে নিরব ভারোবাসে।ইদানীং
তুলির আচরন নিরবের কাছে রহস্যজনক
হয়ে উঠেছে।তুলি নাকি কোন ছেলের
প্রেমে পড়েছে।কথাটি কয়েকবার
নিরবের কানে এসেছে।নিরব শোনা
কথায় বিশ্বাস করেনা।নিজের চোখে
দেখতে চায়, কে সেই বাহাদুর??
'সামনে একবার পেলে হতো, মাংস
থেকে হাড্ডি আলাদা করে দিতাম।'
রাগে ফুসতে থাকে। তার ভালোবাসায়
অন্য কেউ ভাগ বসাবে, এটা চলবে না।
*
সামনে মাসের ১২তারিখে তুলির
জন্মদিন।নিরব মনে মনে অনেক স্বপ্ন
একেছে, এবার সে তুলিকে একটা
ভালো উপহার দেবে।গত বছর তুলি
নিরবকে কয়েকবার বলেছিল । কিন্তু
ওইদিন সে যায়নি।কারণ হাত খালি
ছিল তার।সেদিন মনের দুঃখে
ফার্মাসি থেকেআনা দুটি ঘুমের
ট্যাবলেট খেয়ে ডাটে টানা আঠারো
ঘন্টা ঘুমিয়ে ছিল।
এবার সে গতবারের মত ব্যর্থ হবে না।
এবার তাকে জয়ী হতেই হবে।তুলির
চোখে তার প্রেমিক হয়ে শ্রেষ্ঠত্ব
দেখাতেই হবে।
*
হাতে সময় খুব কম। এমাসে আছে মাত্র
৬দিন।নানান চিন্তা মাথায় ঘুরতে
থাকে। টাকা কোথায় পাবে সে?
পরের দিন স্কুলে গিয়ে প্রাইভেট
টিচারকে বললো, এ মাসে সে পড়বে
না। বাসায় এসে নানান ফন্দি করে
সে। নিজের ঘর থেকে চুরি করে ধান
বিক্রি করে সে। সুযোগ সন্ধানী
ক্রেতা আধা দাম দিয়ে ধান কেনে।
নিরব কিছু বলতে পারে না। রোজ
টিফিন না খেয়ে , এবং হেটে স্কুলে
গিয়ে উপহারের পয়সা জমাতে থাকে।
আর কল্পনায় দেখে সেই শুভ দিনের।
*
দেখতে দেখতে দশ তারিখ পার হয়ে
যায়। আর একটা দিন বাকি। নিরব
রোজ বই নিয়ে প্রাইভেট পড়ার নামে
বেরিয়ে যায়। মাকে মিথ্যা বলে সে।
টিচারের খুব বিপদ তাই তাকে এ মাসে
অগ্রীম দিতে হবে।মানিরবের হাতে
অগ্রিম মাসের টাকা তুলে দেন। সব
মিলিয়ে এক হাজার দুইশ টাকার মত
হলো।সে ভাবে এবার তার সম্পর্কটা
পোক্ত হবে। তুলি এবার নিরবের উপহার
পেয়ে খুশি হবে আর কিপ্টুস বলে
টিটকিরি দেবে না।
*
টাকা নিয়ে নিরব মার্কেটের
উদ্দেশ্যে রওনা হয়। বাসে প্রচন্ড ভীর।
ভেতরে দাড়িয়ে সে ভাবলো , এখান
থেকে যদি কিছু টাকা বাচে তাহলে
মায়ের জন্য কিছু একটা কিনবে।
ভীরের ভিতর কয়েকবার পকেটে হাত
দিয়ে দেখলো তার টাকা ঠিক আছে।
*
মার্কেটে ঢুকে নিরবের মাথা খারাপ
হয়ে গেল। এই টাকার মধ্যে ভালো
কোন উপহার পাওয়া গেল না। অবশেষে
মন খারাপ করে ফুটপাত ধরে হাটতে
থাকে। হঠাৎ চোখ পড়ে রাস্তার এক
হকারের দোকানে।বিভিন্ন ধরনের
মুক্তা ও পাথরের নেকলেস ও কানের
দুল। নিরব এক জোড়া নেকলেস পছন্দ
করে অনেক দর কষাকষি করে সাতশ
টাকা স্থীর করলো। কিন্তু পকেটে হাত
দিয়ে নিরব দেখলো পকেট শূন্য।
পাগলের মত সব পকেট হাতরালো সে।
না কোথাও নেই। নিরবের শরীর
ঘামতে থাকে।
দোকানদার মুখ বাড়িয়ে নিরবের
উদ্দেশ্যে কিছু বাজে কথা বললো।
নিরব নীরবে সহ্য করে বাড়ির দিকে
রওনা দিলো। তার পকেটে একটি
টাকাও নেই। ৫কিলোমিটার পথ হাটতে
হাটতে অনেক রাতে বাড়ি ফিরলো
সে।
অনেক রাতে বাড়ি ফেরার কারনে
মায়ের অনেক ঝাড়ি খেতে হলো।
*
বিছানায় বসে বসে নিরব ভাবে এখন
কি করবে সে? কাল তুলির জন্মদিন।
তুলিকে সে খুশি করবে কিভাবে? ছোট
চাচার কাছে গেলে হয়তো কিছু
পাওয়া পাওয়া যাবে। কিন্তু প্রশ্ন
করবে একগাদা। ছোট চাচাকে একদম
সহ্য করতে পারে না নিরব। তুলিদের
ছাদে গিয়ে তুলির সাথে আড্ডা দিতে
দেখেছে সে আলমচাচাকে। তবুও নিরব
কোন উপায় না পেয়ে আলমের রুমে
গেল।আলম ছিলেন না। কি মনে করে
আলমের ড্রয়ার খুললো নিরব।অনেক
কিছুর ভেতর রঙিন একটি প্যাকেট
পেয়ে খুলে দেখলো একটি সোনার
আংটি। নিরবের চোখের সামনে
ভেসে ওঠে তুলির মিষ্টি মুখখানা।
মুহূর্তে ছোট প্যাকেট থেকে আংটি
লুকোলো নিজের পকেটে। ফিরে এলো
নিজের ঘরে। সারারাত নিরবের ঘুম
হলো না কখন আলম চাচা আংটির জন্য
ওকে চেপে ধরে সে ভয়ে।
*
মা এসে নিরবের রুম তল্লাশী শুরু
করলেন। নিরব বুঝলো যুদ্ধ শুরু হয়ে
গেছে। নিরবের বুক ঢিপ ঢিপ করতে
লাগলো। সাহস সঞ্চয় করে জিজ্ঞেস
করতেই মা বললেন, গতরাতে আলমের
রুম থেকে একটি আংটি চুরি হয়েছে।
তাই তোর ঘর তল্লাশি করছি।
নিরব বললো, চাচা তো আংটি পরেনা।
তিনি তো মিথ্যাও বলতে পারেন।
মা আর খোজাখুজি না করে রুম থেকে
চলে গেলেন।
*
এদিকে আলমের মন খারাপ। নিরবকে
কিছু বললেন না তিনি। আলমের স্বপ্ন
ছিলো আংটি নিজ হাতে তুলির
আঙুলে পরিয়ে দিবেন। খুব পছন্দ করে
কিনেছিল আংটিটা।
*
নিরব গোসল সেরে খুব খুশি মনে নতুন
কাপড় পড়ে তুলিদের বাড়ির উদ্দেশ্যে
বাড়ি থেকে বের হলো।
*
আংটি দেখে তুলি নিরবের মুখের
দিকে তাকিয়ে থাকে।
নিরবও একদৃষ্টে চেয়ে থাকে।
তুলির চোখে দুষ্টুমির হাসি।
আজ তুলিকে খুশি করতে পেরেছে
নিরব।
হঠাৎ আলমচাচাকে তুলিদের বাড়িতে
ঢুকতে দেখে নিরবের এক অজানা ভয়
এলো । নিজেকে লুকালো সে।
আলমকে দেখে তুলি মিট মিট করে
হাসতে থাকে। আলমের হাত ধরে তুলি
তাকে নিজের রুমে নিয়ে যায়।
নিরবের বুক ধপ করে ওঠে । শালার পুত।
*
নিরব চুপিসারে তুলির রুমের জানালা
ঘেষে দাঁড়ালো । কান পাতলো। একটি
ছিদ্র দিয়ে ভেতরে চোখ রাখলো।
আলমের হাতে হাত রেখে তুলি বলছিল ,
-আলম, তোমার উপহার পেয়েছি।
-তার মানে? আলম চোখ তুলে তুলির
দিকে তাকালো।
তুমি বাম হাতটি বাড়িয়ে নিরবের
দেয়া আংটি দেখালো।
আলম জিজ্ঞসু দৃষটিতে তুলির দিকে
তাকালো।
-তোমার ভাতিজা নিরব চুরি করে এনে
আমাকে উপহার দিয়েছে।
- নিরব!
-হ্যা নিরব। নিরবের আনা আংটি
দেখেই বুঝেছি।সে আংটি পাবে
কোথায়।
-আচ্ছা তুলি , আংটি যে চুরি হয়েছে
তুমি জানলে কিভাবে?
-কেন? তোমার বন্ধুর কাছে। যার কাছ
থেকে তুমি টাকা ধার করে আরেকটি
আংটি কিনে এনেছো।
তুলির হাতটি নিজের হাতে আদর করে
আংটি পরিয়ে দিল আলম।
*
নিরব আর কিছু দেখতে চাইলো না।
দ্রুত সটকে পড়লো। বাড়ির দিকে
বিষন্ন মুখে হাটতে হাটতে সে শুধু
ভাবছিলো , হায়রে কপাল, শেষে হলাম
আংটি চোর !
---
গোধূলি স্বপ্ন

কবিতা নীড় || Kobita Nir

কবিতা নীড়
-----------
*
আজ সারাটা দিন কেন যেন
কবিতাকে মনে পড়ছে খুব। মনটাকে
কিছুতেই কোনদিকে ঘুরানো
যাচ্ছেনা। এই মনযোগটা পেতেই
মেয়েটা কি না করেছে!
পাগলী ছিলো বটে। কিন্তু সে
পাগলামী অনেক উপভোগ করতো নীড়।
খামখেয়ালীর বসে অনেক অবহেলা
আর কষ্টও কম দেয়নি মেয়েটাকে।
অথচ আজ কেন জানি অনেকদিন পর
কবিতার পাগলামী নীড়ের একটু
মনোযোগ পাবার আপ্রাণ চেষ্টা, এমন
কি অদৃশ্য ছায়া হয়ে নীড়ের সঙ্গী
হবার চেষ্টায় অবিচল থাকা
কবিতাকে ভীষণ ভীষণ মনে পড়ছে
নীড়ের।।
,
সময়ের আবর্তে ব্যস্ততায় ভবিষ্যত
গড়ার মাঝখানে অনেকটা সময় পার
হলেও মনে হচ্ছে এইতো সেদিনের কথা
, চোখের সামনেই ভাসছে সব।
খুব আনন্দেই দিন কাটছিল দুজনের।
একে অন্যের কেয়ার সারাদিনের সব
কিছু শেয়ার না করলে যেন জীবনের
একটা দিন অপূর্ণ থেকে যেত দুজনেরই।
ভুল করে ভুল সময়ে অনেকটা
অপ্রত্যাশিত ভাবেই পরিচয় হয় কবিতা
নীড়ের। প্রথম দিকে কবিতা নীড়কে
তেমন পাত্তা না দিলেও নীড়ের
বেকার জীবনের অফুরন্ত সময় কাটাতে
কবিতাকে আঁকড়ে ধরার চেষ্টায় হার
মানতে বাধ্য হলো । নীড় খুব সাধারন
ঘরের সাধারন একটা ছেলে। তবে
মানুষকে আকৃষ্ট করার অসাধারন একটা
গুন আছে তার মাঝে। নতুন নতুন বন্ধুত্ব ,
তাদের জানার আগ্রহ , এবং মায়ায়
বাঁধতে তেমন বেগ পেতে হতো না তার।
তবে কবিতাকে ঘিরে তার অন্যরকম
ভালো লাগা তৈরি হয়েছে।কবিতার
সারল্য তাকে মুগ্ধ করে। কবিতার
প্রতি নীড়ের মনোযোগটা কবিতাও
অনুভব করতে শুরু করে। ভালো লাগাটা
তখন থেকেই শুরু।
,
নীড়ের ভাঢলোলাগা মন্দ লাগা, ছোট
বড় দুঃখগুলো, নীড়ের প্রতিবন্ধকতাগুল
ো, লক্ষ্য , স্বপ্ন কিছুই আর অজানা
রইলো না কবিতার। খুব মনোযোগ দিয়ে
তার কথাগুলো শুনতো আর নীড়ের স্বপ্ন
গুলো যেন সত্যি হয় তার জন্য
সৃষ্টিকর্তার কাছে নীড়ের হয়ে
প্রার্থনা করতো। নীড়ও যেন তার
নির্ভরযোগ্য একটা ছোট্ট নীড় পেল।
দুজনেই সবার অন্তরালে নিজেদের
অজান্তেই কখন যেন ছোট্ট সুখের
কবিতা নীড় রচনা করে ফেললো।
যেখানে নিজেকে নির্দিধায় সমর্পণ
করা যায়।

দিন যায় বছর যায় ।এতটুকু ভাটা
পড়েনি তাদের কবিতা নীড়ে। এর
গভীরতা যেন বেড়েই চলেছে।
সারাদিন খুনসুটি , অভিমান,
ভালোবাসার যত্নে অভিমান
ভাঙানো , ছোট ছোট স্বপ্ন বোনা ,
একে অন্যের প্রতি নির্ভরশীলতা
একজনকে ছাড়া অন্যজনকে অসম্পূর্ণ
করে তুলতো।নীড়ের প্রতিটি সদ
পদক্ষেপে অনুপ্রেরণা হয়ে উৎসাহিত
করতো কবিতা। ব্যর্থতার গ্লানীতে
কখনো ডুবে যেতে দেয়নি তাকে।
দশরথ হয়ে পরম ভালোবাসায়
অনুপ্রেরণায় আগলে রেখে নির্ভরতা
দিয়েছে পাশে থেকে। অগোছালো
নীড় প্রথম অনুভব করলো সশরীরে সাথে
থাকাকে পাশে থাকা বলে না। যোজন
দূর থেকেও খুব কাছে এবং পাশাপাশি
পথ চলা যায়। কেউ কাউকে না ছুঁয়েও
জীবন দিয়ে স্বত্তায় আষ্ঠেপৃষ্ঠে
জড়িয় থাকা যায়। প্রতিটি ভোর
তাদের মধুর সম্পর্কের সুচনার সাক্ষী ।
প্রতিটি রাত তাদের স্বপ্ন ছোঁয়া দিন
শেষে আগামী স্নিগ্ধ প্রভাত রচনার
প্রেরণার সঙ্গী।
,
অনেক প্রতিক্ষা আর চেষ্টায়
নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যম
পেল নীড় । সেই সাথে ব্যস্ততাও ঘিরে
ফেললো চারপাশটা। অগোছালো নীড়
নিয়মে কিছুটা বাধা পড়লো। সংগী
ছিলো কবিতা। পরিবারের প্রতি
দায়িত্বটাও যেন বেড়ে গেল।এভাবে
নিজের অজান্তেই কখন যেন
কবিতাকে অবহেলায় ভাসিয় দেয় সে
তা বুঝতেও পারে না।কিন্তু কবিতা
তা-ও মানিয়ে নিয়ে নীড়কে
ভালোবাসায় পরম মমতায় বেধে
রাখতে সচেষ্ট আগের থেকে অনেক
বেশি। তার শুধু একটাই ভাবনা নীড়
যেন নিজেকে কখনোই একা না ভাবে।
,
ধীরে ধীরে নীড়ের অনিচ্ছাকৃত
অবহেলা বাড়তেই থাকে। কবিতার
কথা ভাববার সময়টাও সংকীর্ণ হয়ে
যাচ্ছে। নীড়ের একাকীত্ব দূর করায়
সচেস্ট থাকা কবিতা দিনে দিনে
নিঃস্বঙ্গতার আড়ালে ঢেকে যেতে
চলেছে। বুঝাতে ব্যর্থ নীড়কে সে।
খুনসুটি অধিকার ছোট ছোট আবদার
গুলো কখন যেন অভিমানে জমাট
বাঁধতে শুরু করে কবিতা নিজেও বুঝতে
পারে না। নীড়ের অনুপস্থিতির সমূদ্রে
ক্রমশঃ ডুবে যাচ্ছে।
,
কবিতার অভিমান আর নীড়কে আঁকড়ে
রাখার বড্ড ছেলেমানুষিগুলো নীড়ের
বিরক্তিতে রুপ নেয়।দিন শেষে
ক্লান্ত পরিশ্রান্ত নীড়ের কবিতার
অভিমানগুলোকে অসহ্যকর লাগতে শুরু
করে। অভিমান ভাঙানোর
প্রয়োজনটাও আর আগের মত অনুভব
করে না যেন।
.
নিস্বঙ্গ কবিতা ফোনের এপাশে
নীড়ের অপেক্ষায় থেকে ব্যর্থ হয়।
রাতগুলো বড় বেশি ভারী হয়ে ওঠে।
আবার নিজেকে এই ভেবে স্বান্তনা
দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করে যে,
'এমনটাতো হওয়ারই ছিলো। কেউই
কারো সার্বিকভাবে হতে পারবে না।
প্রতিবন্ধকতা নীড়ের থেকে কবিতারই
যে বেশি। কবিতার ইচ্ছে করলেই
শৃংখলমুক্ত হতে পারে না। '
এভাবনাগুলো কবিতাকে কুড়ে কুড়ে
খায়। যার সাক্ষী রাতগুলো আর
ক্লান্ত ভোরগুলো। ।
,
অভিমান কেউ ভাঙাবেনা জেনেও
অভিমান করে কষ্টে থাকা কবিতা
সারাদিন শেষে অনেকটা নিরুপায়
হয়েই ফোন দেয় নীড়কে।
-হুম বলো।
-এমন করো কেন আমার সাথে ? আমার
ভালো লাগে না তোমাকে ছাড়া।
- ব্যস্ত ছিলাম।
-তাই বলে সারা দিনে একবারো---
-তো কি সারাদিন ফোনে কথাই
বলবো। ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতে
হবে??
-চুপ হয়ে যায় কবিতা । নীরবতা আষ্ঠে
পৃষ্ঠে বেধে নেয় যেন।
-তুমি এমন কেন করো ?(কান্না
লুকোতে না পেরে বললো কবিতা)
- আমি এমনই । এমনই আমি। জন্ম থেকেই
এমন। বুঝেছো? নীড় ফোন কেটে দেয়।
কবিতার অভিমান বিষের মত
লাগছিলো নীড়ের। কদিন থেকে খুব
টেনশন আর কাজের চাপও ছিলো যা
নীড়ের মানষিক অবস্থাকে বিষিয়ে
রেখেছে। নানান কারনে সুযোগ হয়নি
কবিতাকে জানানো।
এদিকে নীড়ের রুঢ় আচরণ কবিতার
মনটাকে ভেঙে গুড়িয়ে দেয় ।কান্না
যেন আর বাধ মানছে না কিছুতেই।
কষ্টের অতল সমূদ্র তাকে অনেক
গভীরে টেনে নিচ্ছে। সেখান থেকে
কেউ তাকে টেনে তুলবে না। বুকে
নেবে না। সময় বড় বেশি নির্মম।
দিন শেষে রাত আসে কিন্তু কবিতা
নীড়ে চাঁদ ওঠেনা।রাত শেষে আবারো
দিন আসে কিন্তু কবিতা নীড়ে সূর্য
ওঠেনা।
,
আমরা কিছু মানুষের কাছে সময়
কাটানোর তুচ্ছ উপলক্ষ মাত্র!
মাঝেমাঝে নিজেকে খড়কুটো মনে
হয়।
অথচ আমাদের পুরোটা সময় তাদের
নামে!
কবিতা বুঝলো এবার তার ফেরার
পালা। সে তার তিল তিল করে গড়ে
তোলা ভালোবাসাকে আর অপমানিত
হতে দেবে না।
কিছু সম্পর্ক বাঁচিয়ে রাখতেই অসময়ে
ইতি টানতে হয়। ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ
এবং ভালোবাসাটুকু শেষ হওয়ার
আগেই সম্পর্ক শেষ করতে হয়।
,
পরদিন কবিতার একটি লেখা পায়
নীড়। ফোনটা বন্ধ রাখার কারনে
পরদিনই লেখাটা পেতে হলো নীড়কে।
"" 'তুমি কিভাবে সবসময় আমার হৃদয়
জিতে নিতে তোমার একটু ভালবাসার
ছোঁয়া দিয়ে?? কিভাবে??
কিন্তু তুমি আর আমার নেই।
শুনেছিলাম, কখনও, কোনদিন, যদি খুব
কষ্টকর কিছু হয় তাহলে সেটা ভুলে
থাকার একমাত্র উপায় মনে করা সেটা
কখনও হয়নি। ঠিক ই শুনেছিলাম মনে
হয়। কারন আমি চাইনা কিছু আমার
মনে থাকুক। একটা জিনিশ যেটা
আমার মনে আছে এখনও --- তুমি
বলেছিলে ,,,,' তুমি আছো বলে শত
প্রবলেমের মাঝেও টেনশন ফ্রী
থাকতে পারি, নিশ্চিন্ত মনে ঘুমাতে
পারি'।কত রাত জেগে অপেক্ষা করেছ
আমার সাথে একটু কথা বলার জন্য,
একা বাসায় ঘুমাতে ভয় পাবো ভেবে
নিজে ঘুমাওনি একটুও। আজ আমি তুমি
ছাড়া খুব একা। কত নির্ঘুম রাত কাটাই
তোমার তা ভাবারও সময় নেই ।
আমি দুঃখিত। কখনও কখনও আমি
তোমাকে সত্যি অনেক কষ্ট
দিয়েছিলাম। অনক সময় কিছু অন্যায়
আবদারও করেছিলাম। কিন্তু কখনই
সেটা আমার উদ্দেশ্য ছিলনা। আমার
জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অংশ ছিলে
তুমি। তোমার সাথে কাটানো
প্রতিদিন আমার কাছে ছিল নতুন এর
মত। It was like everyday is a new
beginning when I am with you. তুমি
আমাকে ভালবাসতে শিখিয়েছিলে।
আমার কানে এখনও সেই কথা ভাসে ‘
তুমি আছো বলেই অনেক কষ্টেও
হাসতে পারি ।' তোমার খুব সুন্দর
একটা মন আছে যা তোমাকে নিয়ে
যাবে অনেক উপরে, হিমালায় কে
ছারিয়ে।কখনও ভয় পেওনা স্বপ্ন
দেখতে এবং বাঁচতে।।
তুমি কিভাবে জেনেছিলে?? কিভাবে
বুঝেছিলে আমার মনের সুপ্ত
আমিকে??
তোমাকে আমি কখনও ভুলবো না।
কখনও সম্ভব ও না। তোমাকে
ভালবেসেছিলাম, ভালোবাসি,
ভালবাসবো। সুনিদ্রায় শায়িত থাকো
তুমি। সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ
উপহার তুমি-আমার জন্য।
। __
এরপর নীড় আর কবিতাকে কোথাও
পেল না। নীড় এটুকু জানে এবং
বিশ্বাস করে নীড়কে ছেড়ে কবিতা
ভালো নেই । কখনো ভালো থাকতে
পারে না। কবিতার ভালো থাকার
নিশ্চয়তা যে একমাত্র নীড়ের কাছেই
বন্ধক রাখা। কিন্তু কোথায় পাবে
কবিতাকে । সেতো তাকে পাবার সব
পথ বন্ধ করে দিয়েছে। নীড় যে তার
কাছে ওয়াদা বদ্ধ তাই কাউকে
নিজের জীবনের সাথে জড়াতে
পারেনা আজও। রোজ দিনের শুরুতে
খাবার আগে আর দিন শেষে
কবিতাকে ফোন দেয় নীড় । যদি ভুল
করেও কখনো কবিতাকে পেয়ে যায়।
অনেক কিছু বলা হয়নি মেয়েটাকে।
এতদিনের সব হিসাব তাকে দিতেই
হবে যে। কবিতাকে হারিয়ে বুঝেছে
সে তার জীবনে কবিতার উপস্থিতি
কতটা জুড়ে। নীরের অধৈর্য অবহেলা
আর কবিতার অভিমান দুজনকে
আলাদা করে দিলেও মনটা সেই একই
জায়গায় পড়ে রইলো দুজনেরই।
_লেখা_গোধূলী স্বপ