Tuesday, December 06, 2016

পীর সাহেব ( ১ম পর্ব )

পীর সাহেব
( ১ম পর্ব )
==================
*
পীর হওয়ার আগে পীর সাহেব যা ছিল
তা মুখে আনলেও ওযু নষ্ট হবে।
দুনিয়ার হেন কুকীর্তি নেই যা সে
করেনি। লুট, নারী অপহরন, অন্যের ঘরে
আগুন দেয়া ছিল তার কাছে ডাল ভাত।
হঠাৎ তার যেন কি হলো! বোল
পাল্টাতে শুরু করলো সে। সাগরেদরা
তো অবাক ! হলো কি ওস্তাদের?
~
-আর কতো? এবার বসে পড়বো। বুঝলি
অন্য পথে আয় করবো। বহুদিন এ লাইনে
ঘুরে দেখলাম ।এ দেশের মানুষ
ডাকাতকে যত ভয় পায় , এর চেয়ে
বেশি ভয় এবং শ্রদ্ধা করে পীরকে।
পীর হয়ে যাব।
-আমাদের কি হবে ওস্তাদ?আমরা খাব
কি করে?
-আমার সঙ্গে থাকবি । ভড়ং ধরবি।
রোজগার যা হয় আধাআধি পাবি।
আমার সঙ্গে মাজারে মাজারে ঘুরবি।
কায়দা-কানুন আয়ত্ব করতে না পারলে
কোন লাইনেই সুবিধা করা যায় না।
এইটা তো মানিস?
- তা তো ঠিকই সাগরেদরা সায় দিল।
~
শুরু হলো ট্রেনিং। জিকির থেকে শুরু
করে সব কিছু রপ্ত করতে মাস চারেক
লেগে গেল।
একদিন দলবল নিয়ে আস্তানা গাড়লো
ভিন গ্রামে। বিজন বনের মধ্যে ভাঙা
ইট দিয়ে অতি পুরোনো কবর বাধিয়ে
সেখানে বসে পড়লো।
গভীর রাতে জিকিরের শব্দে থমথমে
নিস্তব্দতা আরো ভারী হয়ে উঠলো।
গ্রামবাসী অবাক। যে বনের মধ্য দিয়ে
দিনের বেলায়ও মানুষ যাওয়ার সাহস
করে না, সেখানে মানুষের কন্ঠ!
তেলেসমাতি কারবার ! নিশ্চয় জিনরা
জিকির করছে। তারাওতো আল্লার
গুনগান করে।
সকালে অতি সাহসী কয়েকজন লাঠি-
সোঠা নিয়ে বনের মধ্যে ঢুকলো।তারা
আশ্চর্য হয়ে দেখলো ধূপ ধুনোর গন্ধ
মাখা ধোয়া ধোয়া পরিবেশে বসে
জিকির করছেন তার শিষ্যদের নিয়ে
একজন দরবেশ বাবা।
শিষ্যদের মধ্যে একজনের ইশারায়
আঙ্গুলের নির্দেশে তারা সবাই বসে
পড়লো।
~
শোনেন মিয়ারা, আমাদের হুজুর
স্বপ্নে দেখেছেন এখানে শুয়ে আছেন
ফকির শাহ বাবা। তিনি বলেছেন ,
ওরে নাদানের দল আর কত বেভুলে
রইবি?এখনো আমার কাছে দীক্ষা
নিলি না?আমার নামে শিরনি কর।যা
চাইবি তা ই পাবি।
মাঘ মাসের পূর্ণিমায় শিরনি হবে।
আপনারা আসবেন।আরো সবাইকে
বলবেন , তারাও যেন আসে।
~
কথাটা বিদ্যুতের মতো ছড়িয়ে পড়লো
আসে পাশের গ্রামে।দলে দলে লোক
হুমড়ি খেয়ে পড়লো।টাকায় টাকায়
ভরে গেল কবরের পাশে রাখা
দানবাক্স।বন আর বন রইলো না।
লোকালয় হয়ে উঠলো।
-এতো তাড়াতাড়ি সুখ্যাতি পাবেন
পীর সাহেবও ভাবেনি। মুচকি হেসে
বললো , দেখলিতো, আমার কথা কেমন
ফললো? আক্কেল থাকলে আউলিয়া
হতে কতক্ষণ ? বুঝলি আক্কেলই
আউলিয়া।
-হুজুর !ধন্য আপনার বুদ্ধি। ধন্য আপনার
আক্কেল।
সাগরেদরা এখন আার ওস্তাদ বলে না।
বলে হুজুর। হুজুর কথাটার মাহাত্মই
আলাদা। মনের গভীরে গিয়ে শ্রদ্ধা
উঠিয়ে আনে।
~
এখন এখানে পীর সাহেব যা বলে বা
করে তা ই শিরোধার্য । কারো কিছু
বলার নেই। এখন সে প্রতিষ্ঠিত পীর।
তার অতীত বর্তমান নিয়ে কোন প্রশ্ন
উঠে না।
-বদুরে ঘরের জন্য মন কান্দে তোর
মারে আর বইনেরে আনলে কেমন হয়?
হুজুর তার প্রধান শিষ্য বদুর কাছে মনের
কথা খুলে বলে।
ঘর - দোরের পাকা বন্দোবস্ত করে
নৌকা সাজিয়ে মহা ধুমধাম করে বদু
তাদের পীরমাকে নিয়ে আসে
পীরবোনসহ।
~
পীর মা আজিরন তো অবাক! এতোকাল
সংসার করেও লোকটাকে ঠিক চিনতে
পারলো না! লোকে বলতো, তার স্বামী
ডাকাত। মাঝে মধ্যে খোজ খবর
থাকতো না, বলতো জেলহাজত হয়েছে।
তওবা, তওবা! লোকে এতো মিথ্যা
বলতে পারে??
পীর সাহেবের দেহে চিকনাই,চোখে-
মুখে আতর- সুরমার নূরানী উজ্জ্বলতা,
দাড়ি বুক পর্যন্ত ঠেকেছে।সদা
পরিস্কার আর চিরনীর বদৌলতে তা
বাতাসে ফুরফুর করে ওড়ে।দাড়ি খুব
যত্নে রাখে সে। ওই দাড়িই তাকে
উঠিয়ে দিয়েছে শ্রদ্ধার উচ্চ স্থানে।
~
-পীর সাহেব একদিন বদুকে বললো ,
শোন , তোর বোন বড় হইছে। ভালো
পাত্র দেখ।আমার নয়নের পুত্তলিরে
দূরে পাঠাবো না , ঘর জামাই করে
রাখবো।সব সময় আমার চোখের সামনে
থাকবে। তারা দুটিতে নেলা খেলা
করবে । আমি প্রান জুড়িয়ে দেখবো ।
ব্যবস্থা কর।
হুজুর দ্রুত তসবিহ টিপে চলে।
~
মেয়ের জন্য পাত্রি পেতে দেরি হলো
না। ভেতরে ভেতরে বহু জমাজমা করা
হয়েছে। আর চোখের সামনে যা আছে
তা রাজার সম্পদকেও হার মানায়।
মোটামুটি চলনসই গৃরস্থ পরিবারর
ছেলের জোগাড় হয়। ঠেলাঠেলির
সংসারে এ ছেলে বেশি দূর লেখাপড়া
করেনি।
ছেলের বন্ধুরা শুনে তো মহা খুশি।
- সত্যি দোস্ত তোর কপাল বটে।কোন
পূর্ণিমায় তোর জন্ম হয়েছে।
লতিফ লজ্জায় লাল হয়।সেও তার ভাগ্য
পরিবর্তনের সুযোগ করে দেয়ায়
আল্লাহর কাছে শুকুর গুজার করে।
~
চান পীরের মেয়ে জীবন। অপ্সরীর
মতো সুন্দরী না হলেও সুখের ছোয়া
এবং যৌবন তাকেও সুন্দরী করেছে।
পীরের মেয়ের বিয়ে। ঘুম নেই
মুরিদানদের।তারা কি রেখে কি
করলে হুজুরের মন পাওয়া যাবে এ
প্রতিযোগীতায় নেমে গেলো।আনন্দ
মেলা শেষে আখেরি মোনাজাতের
মতো মোনাযাত হলো। পীর সাহেব
নিজে অশ্রুসজল চোখে ভক্ত দের
কাছে দোয়া ভিক্ষা করলো।বললো
দোয়া করো যেন তাদের জীবন সুখে
শান্তিতে কাটে। বছর না ঘুরতে আমার
জীবনের কোল জুড়ে নাতি ভাই আসুক।
সবাই উচ্চস্বরে বললো ,আমিন! আমিন!
~
মুরিদানদের দোয়া আল্লাহপাক কবুল
করেছিলেন। সাত বছরে পাচ সন্তানের
জন্ম দিয়ে জীবন ঠিকই বাবার আশা
পূরণ করেছিল।
কিন্তু ঘন ঘন সন্তান জন্ম দিয়ে
মারাত্মক জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে
মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো। শোকের
মাতম নেমে এলো আস্তানা জুড়ে।
কারো মনে শান্তি নেই, সুখ নেই।
~
দিন যায়, মাস যায় । লতিফ আবার
বিয়ে করার জন্য উতলা হয়ে ওঠে।
-মাথায় বাজ পড়লো হুজুরের। বলে কি!
আমার এতো সাধ্য সাধনার সম্পদ । এর
ভাগিদার জোগাড় করতে চায় ঐ
ছোটলোকের পুত!
এসব ব্যাপারে রাগারাগিতে ভালো
ফল হয়না। ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে
হবে।
বদুর সঙ্গে পরামর্শ হয় গোপনে।
-সুন্দরী দেখে একটা গরীব ঘরের মেয়ে
জোগাড় কর। এক শর্ত দিবি, পীর
সাহেবের ইচ্ছা , তার মেয়ে যেহেতু
অসুখে মারা গেলো রোগ ধরার আগেই,
সেহেতু সে চায় যে মেয়েরে নিজের
মেয়ে বানাবেন তার সারা শরীর
ডাক্তার দিয়া পরীক্ষা করিয়ে
নিবেন।
-বদুকে আরো কাছে টেনে মন্ত্র ঢেলে
দেয় তার কানে। ডাক্তার যা চায় তা-
ই দিয়ে নাড়ি কাটিয়ে আনবি ছেড়ির।
ডাক্তাররে বলবি যেন বলে , পেটে
টিউমার হয়েছে, না কাটলে মারা
পড়বে মেয়ে।
হুজুরের বহু দিনের সঙ্গী বদু। তার অনেক
বুদ্ধিতেই মুগ্ধ সে। আজকের বুদ্ধি শুনে
হতবাক! একটা মেয়ের এতো বড়
সর্বনাশ?
বদুর অন্য মনস্কভাব হুজুরের নজর এড়ায়
না।
-কি ভাবস বদু?পারবি না?
বদু যে চক্রে জড়িয়েছে এর কি না
পেরে উপায় আছে?
,
,,,,,,,,,,,অসমাপ্ত

No comments:

Post a Comment