Tuesday, December 06, 2016

চাপু এবং ভালোবাসা

চাপু এবং ভালোবাসা
==================
বিলাস মুগ্ধ চোখে বেলার দিকে
তাকিয়ে আছে। সুন্দরের তো একটা
মাত্রা আছে ! বেলার সৌন্দর্যের
কোন মাত্রা নেই।মাত্রাহীন সুন্দর।
- কি ব্যপার , এমন বোকার মতো
তাকিয়ে আছে কেন? বেলা হাসতে
হাসতে জিজ্ঞাসা করলো।
-না ভাবছি তোমার একটা নাম দেবো।
বিলাস বললো।
- তুমিতো নাম দিয়েছো, ঐতি। আবার
কি দেবে?
-ঐতি তো কবিতায় ব্যবহার
করেছিলাম। কিন্তু তোমাকে সবসবময়
ডাকার জন্য একটা নাম দরকার।
তোমার নাম চাপু।
-চাপু! এটা আবার কি?
-চাপু মানে চাইনিজ পুতুল। বিস্তর
গবেষনা করে দেখেছি। , তোমার মুখ
পুতুলের মতো। আমার এক ভাগ্নির
চাইনিজ পুতুল আছে।তুমি হুবহু এটির
মতোই। তাই তোমার নাম এখন থেকে
চাপু।
বেলা হাসতে হাসতে চোখে পানি
এনে ফেললো।অনেক কষ্টে হাসি
থামিয়ে বললো ,
-আচ্ছা, ঠিক আছে , এখন বলো নতুন কি
কবিতা লিখেছ।
-বিলাস অন্য দিকে তাকিয়ে বললো,
লিখেছি।
কিন্তু মনে হচ্ছে ঠিক হয়নি। তার
বুকপকেট থেকে একটা ছেড়া কাগজ
দুমড়ে-মুচড়ে পানিতে ফেলে দিলো।
-এটা কি করলে? বেলা চিৎকার দিয়ে
উঠলো।
তুমি কবিতা ফেলে দিলে?সে অবাক
হয়ে তাকিয়ে থাকলো।
-আসলে এখন এই মূহুর্তে তোমাকে
দেখে মনে হচ্ছে ঠিক হয়নি।ভুল
কবিতা।তাই ফেলে দিলাম। বিলাস
বললো।
~
বেলার দুচোখ জুড়ে জল গড়িয়ে পড়ছে।
সে ওড়না দিয়ে মুখ চাপা দিলো। তবুও
কান্নার স্রোত থেমে থাকছে না। তার
সারা শরীর কেপে উঠছে।
বিলাস থতমত খেয়ে গেলো। সে অবাক
হয়ে ভাবলো এমন কি হলো যে, এতো
কান্না শুরু হলো!
বেলার সাথে তার পরিচয় ছয়মাস । এ
পর্যন্ত একবারও বেলাকে সে কাঁদতে
দেখেনি।কিন্তু সে বেলার কান্নার
ছবি কল্পনা করেছিলো। আজ তো সেই
ছবিও ফেল। বিলাস চরম অস্বস্তিতে
পড়লো।
বেলার চুলে হাত বোলাতে বোলাতে
সে বললো , সরি আসলে তুমি এভাবে
নেবে বুঝিনি।
-বেলা কথা বলতে পারছিল না।সে বহু
কষ্টে বললো, তুমি জানো না, তোমার
সব কবিতাই আমি জমাই। তোমার সব
কবিতাই আমার কাছে আছে। এরপরও
আমার সামনে কবিতাটি তুমি ছুড়ে
ফেললে! সে আবার কাদতে লাগলো।
-বিলাস বললো, ঠিক আছে এক্ষুনি
কবিতাটি নিয়ে আসছি।এই বলেই
শার্ট খুলতে লাগলো।
-খবরদার ! তুমি পানিতে নামবে না। গত
সপ্তাহে তোমার জ্বর হয়েছিল। এই
সন্ধ্যায় পানিতে নামলে তোমার
নিউমোনিয়া হয়ে যাবে।বেলা চমকে
উঠলো।তার চোখে এখনো জল।
কাগজটির দিকে সে এখনো তাকিয়ে
রয়েছে।নিউজপ্রিন্টের কাগজটা দ্রুত
পানির সংগে মিশে যাচ্ছে।
-বিলাস অপরাধীর মতো বললো, আসলে
কবিতাটি ভালো হয়নি। আজ যাতে
অবশ্যই আরেকটি লিখে কাল সকালে
তোমার স্কুলের সামনে দাড়িয়ে
থাকবো।
~
-চোখ ভরা রাগ নিয়ে তার দিকে
তাকালো বেলা।
বিলাস চুপ হয়ে গেলো। সে জানে তার
কবিতা কেউ খারাপ বললে খুব রেগে
যায় বেলা।
একবার বিলাসের একটি কবিতা পড়ে
বেলার বান্ধবী শ্যামলী বলেছিলো,
খুব কাঁচা হাতের। ব্যাস !ক্লাসের সব
মেয়ের সামনে শ্যামলীর গালে চড়
মেরে দিয়েছিল বেলা।এরপর কাঁদতে
কাঁদতে বাড়ি। আজও শ্যামলীর সঙ্গে
সে কথা পর্যন্ত বলে না।
~
বেলা তার ব্যাগ থেকে খাতা আর কলম
বের করে বিলাসের হাতে দিলো।
-তাড়াতাড়ি ওই কবিতাটি লিখে
ফেলো। তোমার যা ভুলো মন।
গতকালের কবিতা আজ মনে থাকে না।
বিলাস ভয়ে ভয়ে খাতাটি নিলো।
সত্যিই তার কবিতাটি মনে নেই। তখন
কি লিখেছিলো এখন কি করে মনে
থাকবে? কলম নিয়ে আকাশ-কুসুম
চিন্তা করতে লাগলো সে।
~
বেলা নদীর দিকে তাকালো। নদীতে
খুব স্রোত। দূরে আকাশে মেঘ জমছে।
এমনই এক মেঘলা দিনে বিলাসের তার
প্রথম পরিচয়। স্কুল থেকে সে
ফিরছিলো। পথে তার বান্ধবী অনন্যা
বললো , দেখ বেলা ঐ ছেলেটিকে,
চশমা পরা, রোগা মতো, লম্বা। সে
একজন কবি। পাগলা কবি। ভাইয়ার
বন্ধু।সে প্রতিদিন বিকালে ছাদে
দাড়িয়ে তার লেখা কবিতার প্লেন
আকাশে উড়িয়ে দেয়। কবিতা লেখে
সব ফাউল ধরনের। জঘন্য, বাজে। !কিন্তু
কেউ তার নাম জিজ্ঞাসা করলেই সে
পরিচয় দেয় সে একজন কবি। অনন্যা
হাসতে থাকে।
মজার ব্যপার, ঠিক তখনই কবিতার
একটা প্লেন তার পায়ের কাছে এসে
পড়ে।
বেলা প্লেনটি তুলে নেয়। কাগজের
প্লেনটির ভাজ খুলে কবিতাটি পড়ে
সে। কবিতার নাম " ভালোবাসার
দাবী " কবিতাটি পড়ে বেলার চোখে
পানি এসে যায়। এতো সুন্দর!এতো
সুন্দর!
~
এরপর বেলা প্রতিদিন বিকেলে
রাস্তায় দাড়িয়ে তার কবিতা পড়তো।
এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর হঠাৎ
একদিন সামনে দাড়িয়ে বলে, দেখুন,
আপনি যদি আর কখনো আপনার লেখা
কবিতা এভাবে নষ্ট করেন, নিজেই
ছাদ থেকে লাফ দেবো। আপনার সব
কবিতা আজ থেকে আমার কাছে জমা
রাখবেন। কথাগুলো বলেই বেলা চুপ
হয়ে গেলো।
সে এটি কি বললো? কিভাবে? সে
ভয়ে কাঠ হয়ে গেলো।
ছেলেটি মুচকি হেসে বলেছিলো, জো
হুকুম মহারানী।
~
-এই চা, এদিকে এসো। বেলা, চা
খাবে? বিলাস চায়ের কাপ হাতে
নিয়ে জিজ্ঞাসা করলো।
বেলা চমকে বাস্তবে ফিরে এলো।
-না, চা খাবো না।সে উত্তর দিলো।
এরপর জিজ্ঞাসা করলো লেখা
কতোদূর? বৃষ্টি আসছে। তাড়াতাড়ি
করো। আকাশে খুব মেঘ করেছে।
বিলাস কিছু না বলে চায়ের কাপে
চুমুক দিলো।
~
বেলা আবার অন্যমনস্ক হয়ে পড়লো।
সে একটা লাল রঙের ডায়রি
বানিয়েছে। ডায়রিতে বিলাসের সব
কবিতা জমা আছে। তার খুব ইচ্ছা ওই
কবিতাগুলো দিয়ে একটি বই বের
করবে। বিলাসের কবিতার বই। সে
দেখে চমকে উঠবে। বিলাস তার কোন
কবিতাই গুছিয়ে রাখে না। যখন সব
কবিতা দেখবে তখন হা হয়ে যাবে।
বেলা খোঁজ নিয়ে শুনেছে প্রায় বিশ
হাজারের মতো টাকা হলে বই
ছাপানো যায়। সে টাকা জমাচ্ছে।
প্রতিদিনের টিফিনের টাকা, রিক্সা
ভাড়া জমিয়ে প্রায় আট হাজার টাকা
জমিয়েছে। আরো জমাতে হবে।
বিলাসের কবিতার বই অবশ্যই ছাপা
হবে। এমন সুন্দর কবিতাগুলো নষ্ট হতে
পারে না।
তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আকাশে মেঘ
গুড়গুড় করছে। বৃষ্টি আসবে।
~
বিলাস কবিতা শেষ করলো। সে বললো
, চাপু, বোস। শোন তো কেমন হলো।
বিলাস জোড়ে জোড়ে কবিতা আবৃতি
শুরু করলো।
বেলা শুনতে থাকলো।
~
বিলাস কবিতা পড়া শেষ করে বেলার
দিকে তাকালো।
সে অবাক হয়ে দেখলো বেলার চোখে
পানি। বেলা কাঁদছে।
বিলাস পরম যত্নে বেলার গাল গড়িয়ে
পড়া চোখের পানি মুছে দিল।
হঠাৎ আকাশ কাঁপিয়ে বৃষ্টি শুরু হলো।
বেলা বিলাসের কাধে মাথা রাখলো।
তারা বৃষ্টিতে ভিজতে থাকলো।
____ গোধূলী স্বপ

No comments:

Post a Comment