Wednesday, May 16, 2018

Body Hiter II দিনলিপিঃ “হুন্না লিবাস বডি হিটার!”

দিনলিপিঃ
“হুন্না লিবাস বডি হিটার!”
-
বডি হিটার।
মানে যা শরীরকে গরম করে।
উত্তাপ দেয়। উষ্ণ করে।
স্ত্রীর ভূমিকা কী, বডি হিটিং, স্বামীর শরীর গরম করা?
সোজাসাপটা উত্তর দিতে গেলে, অবলীলায় বলতে হবে:
= জ্বি, স্ত্রীর অন্যতম একটা কাজ হলো, স্বামীকে গরম করা।
তবে উল্টোটাও সত্যি। স্বামীর একটা ভূমিকাও তাই।
স্ত্রীর বডি ‘হট’ করা।
দু’জনের মধ্যেই আল্লাহ হিটিং সিস্টেম ফিট করে দিয়েছেন।
উঁহু! এটা আমার কথা নয়।
-কার কথা?
-স্বয়ং আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) এর কথা। তাও যার তার সম্পর্কে নয়, খোদ নবীজি (সাঃ) সম্পর্কে।
আপনি কোথাকার এত ‘রুচিবাগীশ’ চলে এসেছেন!
ওরে আমার লাজুক শর্মিলী রে!
সুন্নাতের আলোচনায় শরম?
সুন্নাত পালনে শরম?
.
একটা গল্প শোনা যাক!
গল্পটা সবার জানা।
তারপরও আরেকবার হলে ক্ষতি নেই!
= হুযুর ওয়াজ করতে গিয়েছেন। গ্রামে। ধানী ফসল উঠেছে।

মানুষের মনে সুখ। পকেটে সুখ।
সুখের চোটে কেউ ওয়াজ-মাহফিল দিচ্ছে।
কেউ যাত্রাপালার আয়োজন করছে।
এবার ফসল মাশাআল্লাহ ভালোই হয়েছে।
আল্লাহ-খোদার নাম না নিলে কেমন দেখায় না!
তাই মধুপুরবাসীর ইচ্ছে হলো, একটা ওয়াজের আয়োজন করবে!
সুরেলা একজন ওয়ায়েজ দাওয়াত দেয়া হলো।
সদ্য পাশ দেয়া কচি বয়েসের আলেম। রক্ত গরম। গলা গরম।
মাথা গরম। ইলম গরম।
আরো অনেক কিছুই গরম। হুযুর মাইক পেয়ে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না।
দীর্ঘ এক ওয়াজ দিলেন।
ওয়াজের এক পর্যায়ে হুযুর বললেন:
-আপনারা পাক-পবিত্রতার দিকে নযর রাখবেন।
গ্রামের মানুষজন এদিকটাতে ভীষণ উদাসীন।
তারা মা-বোনদের শাড়ি দিয়ে সেলাই করা ‘কাঁথা’ গায়ে দেয়।
ছিঃ ছিঃ ছিঃ! এমন কাঁথা কিভাবে গায়ে দেন? ঘেন্না লাগে না?
এ-ধরনের কাঁথা না ধুয়ে গায়ে দেয়া যাবে না।
.
ওয়াজ শেষ।
গ্রামের মানুষেরা খাবারের আয়োজনে কমতি করে নি।
রান্নাটাও হয়েছে মন্দ না।
বেশ জমিয়ে খাওয়া গেছে।
কাতলা মাছের মুড়োটা!
আহ! মোরগের রানটা? লা জওয়াব!
মুগ ডালের চচ্চরি?
ওহ! এখনো জিভে লেগে আছে উমম।
শেষে গামছাপাতা দৈ?
কলিজাটা মোচড় দিয়ে উঠছে!
পেটে আর জায়গা ছিল না বলে।
তা এত কষ্টের মধ্যেও সুখ, একটা পদও ‘অনাঘ্রাত’ ছিল না।
ঢেঁকুরের মধ্যে কী রকম খোশবাই ছড়াচ্ছে!
আল্লাহ মালুম!
অন্যকিছুও বোধ হয় সুবাসিত হয়ে গেছে!
.
এবার শোয়ার পালা।
কী নরম আর তুলতুলে বিছানা।
শুলেই ঘুম চলে আসবে।
এ কি! গায়ে দেয়ার যে কিছু নেই?
কেমন বেত্তমিজি!
রাজভোগের পর শরীফ মেজাজটাই খাট্টা হয়ে গেলো।
-সভাপতি সাহেব!
-জ্বি হুযুর!
-আমি মাঘ মাসের এই কনকনে শীতে কি মারা পড়ব?
-কেন হুযুর কী হয়েছে?
-আমি গায়ে দেবো কী?
-ইয়ে মানে, হুযুর ওয়াজে বলেছিলেন, মেয়েছেলেদের শাড়ী দিয়ে সেলাই করা কাঁথা গায়ে দেয়া পুরুষের জন্যে হারাম! তাই........!
(সবাই গল্পটার শুধু এটুকুই জানে।
বাকীটা অনেকেরই জানা নেই।
তাহলে গল্পের বাকী অংশ? ..... চলবে)
.
আচ্ছা, হিটিং সিস্টেম নিয়ে আলোচনাটা আপাতত ‘ফ্রিজ’ করে রাখা যাক।
তার আগে শিরোনামের প্রথম অংশকে ‘হিট’ করা যাক।
.
কুরআন কারীমে একটু পরপরই কিছু বাক্য পাওয়া যায়।
এগুলো অনেকটা ‘ইউনিভার্সাল ট্রুথ’-এর মতো।
চিরন্তন সত্য।
সর্বকালের জন্যে প্রযোজ্য।
তার মানে এই নয়, অন্য অংশগুলো ব্যতিক্রম।
কুরআন কারীম অতি অল্পকথায় অনেক বড় বড় বক্তব্য প্রকাশ করে।
দুয়েক শব্দেই বিরাট বিরাট মূলনীতি দাঁড় করিয়ে দেয়।
তেমনি দু’টি বাক্য হলোঃ
➜ হুন্না লিবাসু-ল্লাকুম। তারা (স্ত্রীরা) তোমাদের জন্যে পোষাক। আবরণস্বরূপ।
➜ আনতুম লিবাসু-ল্লাহুন্না।
তোমরা (স্বামীরা) তাদের জন্যে পোষাক। আবরণস্বরূপ।
মাত্র কয়েকটা শব্দে কুরআন কারীম পুরো দাম্পত্যজীবনকে জীবন্ত করে দিয়েছে। সব সমস্যার সমাধান দিয়ে দিয়েছে।
সমস্ত সুখের আকরকে রক্তমাংসময় করে দিয়েছে। কিভাবে?

(এক) একে অপরের জন্যে আসলেই আবরণস্বরূপ। সুরক্ষা।
পোশাক পরলে, বিপদাপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
স্বামী বা স্ত্রী থাকলে, হারাম থেকে বেঁচে থাকা যায়। গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা যায়। চারিত্রিক বিচ্যুতি থেকে বেঁচে থাকা যায়। পদস্খলন থেকে বেঁচে থাকা যায়।

(দুই) পোশাক পরলে, বাইরের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। রোদের উত্তাপ থেকে। শীতের প্রকোপ থেকে। সাপ-বিচ্ছু থেকে। পোকা-মাকড়ের দংশন থেকে।
স্বামীও তার স্ত্রীকে সেভাবে সব ধরনের বাহ্যিক অনিষ্ট থেকে রক্ষা করেন।
বদলোকের লোলুপতা থেকে হেফাযত করেন।

(তিন) পোশাক সতর ঢেকে রাখে। লজ্জাস্থান ঢেকে রাখে।
মান-সম্ভ্রম রক্ষা করে।
শালীনতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
শরীরের দোষ-ত্রুটি-খুঁত লুকিয়ে রাখে। স্বামী-স্ত্রীও একে অপরের দুর্বলতাগুলো অন্যদের থেকে আড়াল করে রাখে। আচ্ছাদন দিয়ে রাখে।

(চার) পোশাক পরলে মানুষ প্রশান্তি অনুভব করে। আরাম পায়। স্বস্তি পায়। নিরাপত্তাবোধ করে। নিশ্চিন্ত হয়। উসখুসভাব থাকে না।
খুঁত-খুঁতানিও থাকে না।
স্বামী-স্ত্রী পাশে থাকলেও জীবনে পরম ‘স্থিতি’ আসে। থিতুভাব আসে।

(পাঁচ) জ্ঞানী ব্যক্তি মাত্রেই নিজের জন্যে উপযুক্ত পোষাক বেছে নেয়।
কোন পোষাকটা নিজের জন্যে বেশি উপযুক্ত হবে, চিন্তা-ভাবনা করে। পরামর্শ করে। মার্কেটে যাওয়ার সময় সাথী-সঙ্গীদের নিয়ে যায়।
যেন উপযুক্ত রঙটা কেনা যায়। সঠিক কাপড়টা পাওয়া যায়।
স্বামী-স্ত্রীর ব্যাপারটাও এমনি।
উপযুক্ত মানুষটাকেই বেছে নিতে হয়। তাহলেই শান্তি।

(ছয়) পোষাক মানুষকে পরিপূর্ণতা দেয়। অসম্পূর্ণতাগুলোকে ভরাট করে দেয়। স্বামী-স্ত্রীও একে অপরের অসম্পূর্ণতাগুলো দূর করে।
যৌথ প্রচেষ্টায় দু’জনের খামতিগুলো দূর হয়। সংসারে নানা অসঙ্গতি থাকলেও, ঢেকেঢুকে রাখে।
ঘরের কথা পরে জানে না।

(সাত) সবাই নিজের জন্যে সুন্দরতম পোষাক বেছে নিতে চায়।
ঝলমলে পোষাক চায়।
নিখুঁত ডিজাইনের সেটটা সংগ্রহ করতে চায়।
নিজের ব্যক্তিত্বের সাথে খাপ খায় এমন পোশাকটার জন্যে হন্যে হয়ে ফেরে।
এ-দোকান সে-দোকান করতে করতে পা ফুলিয়ে ফেলে।
স্বামী বা স্ত্রীও তেমন ‘খাপ খাওয়ানো’ হওয়া উচিত।

(আট) পোশাক আর শরীরের মাঝে একটা সম্পর্ক থাকে।
একটা আরেকটার সাথে অঙ্গাঙ্গী জড়িয়ে থাকে। অপরিহার্য্যভাবে। অবিচ্ছেদ্যরূপে। স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্কও তেমনি। আত্মিক। শারীরিক। আবেগের। অনুভূতির।

(নয়) পোশাক আঁটসাঁট হয়ে গেলে, অনেক সময় সেটা পরেই চলাফেরা করতে হয়। প্রথম প্রথম কোনও কোনও পোশাক একটু আঁটো লাগে।
বাধো বাধো ঠেকে। পরে আস্তে আস্তে সয়ে যায়।
সহনীয় হয়ে আসে। স্ত্রী-স্বামীও এমনি।
সহ্য করে নিতে হয়। হজম করতে হয়।
কষ্ট হলেও জোর করে থাকতে হয়।
আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে আসে।

(দশ) পোশাক আর শরীর এক হয়ে থাকে। দোঁহে মিলে। যেন দু’টো মিলে এক সত্তা। এক প্রাণ। এক দেহ। স্বামী-স্ত্রীও তেমন। দু’জন হলেও, থাকতে হয় একদেহের মতো।
একাকার হয়ে। একীভূত হয়ে। একে অপরের মধ্যে লীন হয়ে।

(এগার) পোশাক পরলে এক ধরনের প্রশান্তি নেমে আসে। মনে ও তনে।
আরাম আরাম বোধ হতে থাকে।
স্বামী-স্ত্রীও তেমনি।
কাছে গেলেই ভাল লাগা শুরু হয়। আরামবোধ হতে শুরু করে। ( ﺳَﻜَﻦٌ ) সাকান শান্তিবোধ হতে থাকে।
কাতাদা রহ. বলেছেনঃ
লিবাস অর্থ: সাকান। শান্তি।

(বারো) পোশাক তৈরী করার পর, ডিজাইন বা সেলাই পছন্দ না হলে, পরিবর্তন করা হয়।
নতুন করে সেলাই করা হয়।
কুঁচি, ফুল, ভাঁজ নতুন করে দেয়া হয়। স্বামী-স্ত্রীও তেমন।
সাংসারিক জীবনে একসাথে থাকতে গেলে, উভয়ের মাঝেই কিছু অভ্যেস-আচরন ধরা পড়ে।
যৌথ জিন্দেগীর জন্যে এসব অভ্যেস ক্ষতিকর।
তাই এসব ‘খাসিয়ত-খাসলত’ পরিবর্তন করা আবশ্যক হয়ে পড়ে। নিজেকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর প্রয়োজন হয়ে পড়ে।

(তেরো) বিপদের সময়, শীত-গ্রীষ্মে পোশাকই মানুষকে ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে।
প্রচন্ড ঠান্ডার প্রকোপ, তীব্র গরমের ঝাপটা থেকে বাঁচতে মানুষ পোশাকের আশ্রয় নেয়।
জীননের নানা ঘাত-প্রতিঘাতেও স্বামী-স্ত্রী একে অপরের কাছে আশ্রয় খোঁজে। সান্তনা খোঁজে।

(চৌদ্দ) তোমার জন্যে পোশাকস্বরূপ।
তার মানে এটাই তোমার জন্যে নির্দিষ্ট।
অন্য কারো চিন্তা করো না।
অন্য কারো দিকে তাকিও না।
অন্য কারো দিকে উঁকি দিও না।
অন্য কারো প্রতি প্রলুব্ধ হয়ো না।
অন্য কারো প্রেমে পড়ো না।

(পনের) লিবাস মানে? বৈবাহিক সম্পর্ক। অর্থাৎ: পারস্পরিক বোঝাপড়া। পারস্পরিক একাত্মতা।
পারস্পরিক সৌহার্দ্য।
পারস্পরিক সম্প্রীতি।
পারস্পরিক নির্ভরতা।
পারস্পরিক সহযোগিতা।
কুরআনের ভাষ্য অনুযায়ীঃ
পারস্পরিক ( ﻣَﻮَﺩَّﺓٌ )-মাওয়াদ্দাহ।
প্রগাঢ় ভালোবাসা।
পারস্পরিক ( ﺭَﺣَﻤَﺔٌ )-রহমত। হৃদ্যত।

(ষোল) রবী বিন আনাস (রহঃ) বলেছেন: লিবাস মানে লিহাফ। লেপ।
শীতের সময় যেমন লেপ গায়ে দেয়, স্বামী-স্ত্রীও একে অপরকে গায়ে দিবে।
উষ্ণতা বিলাবে।

(সতের) পোশাক মাঝে মধ্যে খুলে রাখতে হয়।
শরীর থেকে আলগা করতে হয়। দু’জনের মাঝেও কখনো কখনো বাঁধন আলগা হয়ে আসে। দূরত্ব সৃষ্টি হয়। বৈরিতা তৈরী হয়।
সম্পর্কটাকে ঝালাই করার প্রয়োজনেই, সংকটের সময় দু’জন কিছুটা সময় আলাদা-অন্তরালে থাকা জরুরী।
নতুন করে শুরুর জন্যে এটা বেশ উপযোগী।

(আঠার) লিবাস শব্দটাকে রূপকার্থে ব্যবহার করা হয়েছে।
বাস্তবে তো স্বামী-স্ত্রী লিবাস নয়।
লিবাস বলে, পোশাক যেমন শরীরের সাথে লেপ্টে থাকে, দু’জনকেও এভাবে আজীবন লেপ্টে থাকার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে।

(উনিশ) আরবী অলংকার-শাস্ত্র অনুযায়ী, লিবাস শব্দটা ‘একবচন’।
দু’জনের ক্ষেত্রেই একবচনই ব্যবহার করা হয়েছে। এবং লিবাস শব্দটার কোনও বিশেষণ ব্যবহার করা হয়নি।
অর্থাৎ কোনও বাড়তি কথা নেই। অতিরিক্ত প্রটোকল নেই। অপ্রয়োজনীয় আড় নেই। সরাসরি।
স্বামী-স্ত্রীর মাঝেও কোনও আড়াল থাকবে না। প্রটোকল থাকবে না।
আড়ম্বর থাকবে না।
যা কিছু হবে, সব সরাসরি।
ডিরেক্ট একশন।

(বিশ) একে অপরের জন্যে ‘লিবাস’। এখানে দু’জনের সম্পর্ককে লিবাস ও শরীরের সম্পর্কের সাথে ‘তুলনা’ করা হয়েছে।
উপমা দুই ধরনের হয়ঃ-
➝ ক: হিসসি। স্পর্শজাত। ধরা যায়। ছোঁয়া যায়। অর্থাৎ পোশাক যেমন শরীরকে চারদিক থেকে বেষ্টন করে রাখে, আগলে রাখে, স্বামী-স্ত্রীও একে অপরকে এভাবে আগলে রাখবে।
➝ খ: আকলী। বুদ্ধিবৃত্তিক। অনুভূতিজাত। পোশাক শুধু বাহ্যিকভাবেই নিরাপত্ত দেয় না।
মানসিকভাবেও দেয়। বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে মাঠে নামা আর শুধু আটপৌরে পোশাক পরে মাঠে নামার মধ্যে নিশ্চই আকাশ-পাতাল তফাত হবে। দু’জনের মানসিক স্থিতি-অস্থিতির মাত্রায় অনেক ফারাক হবে।
স্বামী-স্ত্রী শুধু একে অপরের জন্যে বাহ্যিক ‘আবরন’ হবে না। দু’জন দু’জনকে মানসিক ‘সাপোটর্’ও দেবে।

(একুশ) প্রথমে স্বামীকে বলা হয়েছে: স্ত্রীরা তোমাদের জন্যে আবরণস্বরূপ।
স্ত্রীদেরকে প্রথমে তাদের স্বামীর কথা বলা হয়নি।
তার মানে, একজন স্ত্রীর জন্যে স্বামী যতটা প্রয়োজন, একজন স্বামীর জন্যে স্ত্রীর প্রয়োজন তার চেয়ে বেশি।
বুড়ো বয়েসের কথা চিন্তা করলে ব্যাপারটা খোলাসা হয়ে যাবে।
বুড়ো মারা গেলে, বুড়ি বাকি জীবন পার করে দিতে পারে।
অতবেশি সমস্যা হয় না।
কিন্তু বুড়ি মরে গেলে, বুড়োর সবদিক আঁধার হয়ে যায়। স্ত্রী ঘরে থাকে।
তার পাপের আশংকা কম।
পাপের সুযোগ কম। স্বামী বাইরে বাইরে থাকে।
তার পাপের সুযোগ বেশি।
তাই তার স্ত্রীরও প্রয়োজন বেশি।
আবার এটাও বলা যায়, সংসারে স্বামীর চেয়ে স্ত্রীর ভূমিকাই বেশি প্রভাবশালী। সন্তান লালনপালনের দিকটা লক্ষ্য করলে, পরিষ্কার হয়ে যাবে বিষয়টা।

(বাইশ) বৈবাহিক সম্পর্কটা শুধু বাহ্যিক রুসুম-রেওয়াজ নয়।
একজন আরেকজনের পোশাক বলে, বোঝানো হয়েছে, একা একা থাকা নয়।
যৌথভাবে থাকাই কাম্য।
তাহলে পারিবারিক বন্ধন অটুট থাকবে।
অফিসিয়াল সম্পর্ক নয়।
কৃত্রিম হাই-হ্যালোর সম্পর্ক নয়।
আলাদা সত্তা, ব্যক্তি স্বাধীনতার চর্চা নয়। দু’জনকে থাকতে হবে এক হয়ে।
এটাই পোশাকের দাবি।
লিবাসের নিগূঢ় মিনিং।

(তেইশ) পোশাককে সুন্দর রাখতে হয়। পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়। দু’জনের সম্পর্ককেও তরতাজা রাখতে হয়।
জীবন্ত প্রাণবন্ত রাখতে হয়।
পোশাকে ময়লা আর্বজনা যাতে না লাগে,সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হয়। দু’জনের সম্পর্ককেও যেন আবিলতা না লাগে, সেদিকে চৌকান্না থাকতে হয়।

(চব্বিশ) পোশাককে গ্রহনযোগ্য করার জন্যে সুবাস ব্যবহার করতে হয়।
সুন্দর বোতাম লাগাতে হয়।
দু’জনের সম্পর্ককে সুন্দর করতে হলে, টেকসই করতে হলে, গ্রহনযোগ্য করতে হলেও এমন কিছু করা প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সুন্দর কথা।
ভদ্র ও সৌজন্যমূলক আচরণ দিয়ে। উপহার কিনে দিয়ে।
কোথাও বেড়াতে নিয়ে গিয়ে।
আদর দিয়ে। সোহাগ দিয়ে।
হাসি-কৌতুক দিয়ে। আনন্দ দিয়ে। চাঁদনি রাতে দৌড় প্রতিযোগিতা করে এবং......।

(পঁচিশ) পোশাককে ধোয়া প্রয়োজন। মাঝেমধ্যে বেশি ময়লা হয়ে গেলে, ধোপার কাছেও দেয়া প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সংসারেও ময়লা জমে।
কিছু ময়লা নিজেরাই ধুয়ে ফেলা যায়।
কিছু ময়লা ধুতে তৃতীয় পক্ষের প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
তখন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়াই যুক্তিযুক্ত।

(ছাব্বিশ) পোশাককে অতি যত্নের সাথে ব্যবহার করতে হয়। দু’জনকে একে অপরের সাথে কোমল আচরণ করতে হয়।

(সাতাশ) মেয়ের শোকাতুর বাবা-মাকে আশ্বস্ত করা হয়েছে।
মেয়ে তোমাদের কাছ থেকে আরেক ঘরে গেলেও, স্বামী তাকে পোশাকের মতোই যত্ন করে রাখবে।

(আঠাশ) একটা চ্যালেঞ্জ এখানে দেয়া যায়, সমস্ত জ্বিন-মানব একসাথ হলেও, এমন একটা ব্যাপক অর্থবহ বাক্য বানানো সম্ভব হবে কি?
দাম্পত্যজীবনের সবদিককে ধারন করতে পারে এমন?

(উনত্রিশ) পোশাক পরা মানে, পোশাকের মধ্যে ঢুকে পড়া।
স্বামী-স্ত্রী একে অপরের পোশাক মানে?
একজন আরেকজনের মধ্যে ঢুকে পড়া। ভালোবাসায়। মহব্বতে। অনুরাগে। বোঝাপড়ায়। সমঝোতায়। গভীর আবেশে।

(ত্রিশ) পোশাক শরীরকে তাপ দেয়।
স্বামী-স্ত্রীও একে অপরকে তাপ দেয়।
কিভাবে?
ইমাম বুখারী (রহঃ) এর গুরুস্থানীয় ব্যক্তি হলেন ‘ইবনে শায়বা’ (রহঃ) তিনি তার বিখ্যাত কিতাব ‘মুসান্নাফে একটা অধ্যায়ের শিরোনাম দিয়েছেন: গোসলের পর পুরুষ তার স্ত্রী থেকে উত্তাপ গ্রহণ।
ইমাম তিরমিযী (রহঃ)ও তার বিখ্যাত কিতাবে এমন শিরোনাম দিয়েছেন।
এ-বিষয়ক হাদীস সংগ্রহ করেছেন।
কিছু পড়ে নেয়া যাকঃ
➨ ১: আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) বলেছেন: আল্লাহর রাসূল ফরজ গোসল করার পর, আমাকে জড়িয়ে ধরে ‘উত্তাপ’ গ্রহণ করতেন।
আমিও তাকে আমার সাথে জড়িয়ে নিতাম।
আমার গোসল তখনো বাকী ছিল,
এ-অবস্থাতে।
(তিরমিযী)।
➨ ২. উমার (রাঃ) ইবনে উমার (রাঃ) আবু দারদা (রাঃ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) ও এমন মজার ও সুখকর আমল করেছেন বলে হাদীসে আছে।
➨ ৩. ইবনে বলেছেন: আমি ফরয গোসল করে, স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরি।
সে গোসল করার আগেই।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন: শীতকালে কুরাইশ পুরুষদের এটাই ছিল জীবনরীতি।
➨ ৪. ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেছেন: আমি স্ত্রী থেকে শীতে উষ্ণতা গ্রহণ করি।
গ্রীষ্মে শীতলতা গ্রহণ করি।
☰ কাপড় পরা থাকলে, উত্তাপ ভালোভাবে আসবে না।
আর আম্মাজান শব্দ ব্যবহার করেছেন: ( ﺍﺳﺘﺪﻓﺎﺀ ) ইস্তেদফা‘।
উষ্ণতা লাভ করা।
এটা কাপড় থাকলে জোরালো হয় না।
চামড়ার সাথে চামড়া লাগলে যতোটা হয়। হাদীসের ব্যখ্যাগ্রন্থগু
লোতে এমনটাই বলা হয়েছে।
.
এবার আসা যাক ওয়াজের বাকী অংশেঃ……………
.
হুযুর এমনিতে গরম।
সভাপতির কথা শুনে আরো গরম হয়ে গেলেন,
-আপনাদের আয়োজন দেখে তো আমি ভেবেছিলাম আপনারা বুদ্ধিমান। এখন ধারনা পুরোপুরি উল্টে গেলো!
-কেন হুযুর! আমরা বোকামীর কী করলাম?
-আমি কি শুধু কাঁথার ওয়াজ করেছি!
এত টাকা দিয়ে ওয়াজের এন্তেজাম করেছেন!
নিজেরাই যদি মনোযোগ দিয়ে ওয়াজ না শুনবেন, তাহলে এত পরিশ্রমের কী মূল্য রইল!
-হুযুর ভুল হয়ে গেছে! একটু যদি ধরিয়ে দিতেন!
-আমি অবিবাহিতদের বিয়ে করিয়ে দেয়ার কথা বলিনি?
স্বামী-স্ত্রী কিভাবে সুন্নাত তরীকায় থাকবে, সে ওয়াজ করিনি!
শীতকালে নবীজি কিভাবে আম্মাজানের কাছ থেকে উত্তাপ গ্রহণ করতেন সেটা খুলে বলিনি!
খালি কাঁথার কথাটা মনে রাখলেন?
-সুবহানাল্লাহ! আল্লাহর লাখ লাখ শোকর! হুযুরের ওয়াজ শুনে গিন্নি এত খুশি হয়েছে, আর বলার নয়। গিন্নি একটা আবদারও জুড়েছে!
-আবার কী আবদার!
-হুযুর যদি রাজি থাকেন! আমাদের ‘মা’ রাবিয়াকে আপনার হাতে তুলে দেবার কথা বলেছে! মেয়ের মায়ের দুশ্চিন্তা, ইতিমধ্যে অারো কয়েকজনও এ-বিষয়ে চিন্তাভাবনা করতে শুরু করেছে!
-ইন্নালিল্লাহ! ছিঃ ছিঃ আব্বাজান! আমি এতক্ষণ আপনার সাথে কত বেয়াদবিই না করে ফেলেছি। মাফ করে দিন!
-তাহলে কি......!
-জ্বি জ্বি! শুভ কাজে দেরী কেন!
মাসয়ালা হলো, বিয়ের বয়েস হওয়ার পর, বিয়ে ঠিক হযে যাওয়ার পর দেরী করতে নেই!
-এত রাতে?
-তবে কি অামি কি এই দীর্ঘ শীতের রাতে হি হি করে মরবো?
I

1 comment: