Thursday, October 18, 2018

যুগের এইকাল/সেকাল। হারিয়ে যাওয়া অতীত Past Vs Present

Kodak কোম্পানিকে মনে আছে?
১৯৯৮ সালে কোড্যাক কোম্পানিতে প্রায় ১লক্ষ ৭০ হাজার কর্মচারী কাজ করতেন।
এবং বিশ্বে ছবি তোলার প্রায় ৮৫% ই কোড্যাক ক্যামেরায় তোলা হত। গত কয়েক বছরে মোবাইল ক্যামেরার বাড়বাড়ন্ত হওয়ায় এমন অবস্থা হয় যে Kodak ক্যামেরার কোম্পানীটাই উঠে যায়। এমনকি Kodak সম্পুর্ন দেউলিয়া হয়ে পড়ে এবং এদের সমস্ত কর্মচারীকে বাধ্যতামূলক ছাঁটাই করা হয়।
ওই একই সময়ে আরো কতগুলি বিখ্যাত কোম্পানি তাদের ঝাঁপ পাকাপাকি বন্ধ করতে বাধ্য হয়।
যেমন-
HMT (ঘড়ি)
BAJAJ (স্কুটার)
DYANORA (TV)
MURPHY (Radio)
NOKIA (Mobile)
RAJDOOT (Bike)
AMBASSADOR (গাড়ি)
এই উপরের কোম্পানিগুলোর মধ্যে কারুরই কোয়ালিটি খারাপ ছিল না। তবুও এই কোম্পানিগুলো উঠে গেল কেন? কারণ এরা সময়ের সাথে নিজেকে বদলাতে পারেনি।
এখনকার সময়ে দাঁড়িয়ে আপনি হয়তো ভাবতেও পারছেন না যে সামনের 10 বছরে দুনিয়া কতটা পাল্টে যেতে পারে! এবং আজকের 70%-90% চাকরিই সামনের 10 বছরে সম্পুর্নভাবে বিলুপ্ত হতে চলেছে। আমরা ধীরে ধীরে ঢুকে পড়েছি "চতুর্থ শিল্প বিপ্লব"-এর যুগে।
আজকের বিখ্যাত কোম্পানিগুলোর দিকে তাকান-
উবার কেবলমাত্র একটি Software-এর নাম।
না, এদের নিজস্ব কোন গাড়ি নেই। তবু আজ বিশ্বের বৃহত্তম ট্যাক্সি ভাড়ার কোম্পানি হল উবার।
Airbnb হল আজকে দুনিয়ার সবথেকে বড় হোটেল কোম্পানি। কিন্তু মজার ব্যাপার হল, পৃথিবীর একটি হোটেলও তাদের মালিকানায় নেই।
একইভাবে Paytm, ওলা ক্যাব, Oyo Rooms ইত্যাদি অসংখ্য কোম্পানির উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে।
আজকে আমেরিকায় নতুন উকিলদের জন্য কোন কাজ নেই, কারণ IBM Watson নামে একটি আইনি Software যে কোন নতুন উকিলের থেকে অনেক ভাল ওকালতি করতে পারে। এইভাবে পরের 10 বছরে প্রায় 90% আমেরিকানদের আর কোন চাকরি থাকবে না। বেঁচে থাকবে খালি বাকি 10%। এই 10% হবে বিশেষ বিশেষজ্ঞ।
নতুন ডাক্তারদেরও চাকরি যেতে বসেছে। Watson নামের Software মানুষের থেকেও 4 গুন নিখুঁত ভাবে ক্যানসার এবং অন্যান্য রোগ শনাক্ত করতে পারে। 2030 সালের মধ্যে কম্পিউটারের বুদ্ধি মানুষের বুদ্ধিকে ছাপিয়ে যাবে।
2019 সালের মধ্যেই রাস্তায় নামতে চলেছে চালকহীন গাড়ি। 2020 সালের মধ্যেই এই একটা আবিষ্কার বদলে দিতে পারে গোটা দুনিয়ার চালচিত্র। এর ফলে সামনের 10 বছরে আজকের 90% গাড়িই আর রাস্তায় দেখা যাবে না। বেঁচে থাকা গাড়িগুলো হয় ইলেক্ট্রিকে চলবে অথবা হাইব্রিড গাড়ি হবে। রাস্তাগুলো ক্রমশঃ ফাঁকা হতে থাকবে। পেট্রোলের ব্যবহার কমবে এবং পেট্রোল উৎপাদনকারী আরব দেশগুলি ক্রমশঃ দেউলিয়া হয়ে আসবে।
তখন গাড়ি লাগলে, উবারের মত কোন Software-এর কাছেই গাড়ি চাইতে হবে। আর গাড়ি চাইবার কিছুক্ষনের মধ্যেই সম্পুর্ন চালক-বিহীন একটা গাড়ি আপনার দরজার সামনে এসে দাঁড়াবে। আপনি যদি অনেকের সাথে ওই একই গাড়িতে যাত্রা করেন, তাহলে মাথাপিছু গাড়িভাড়া বাইকের থেকেও কম হবে।
গাড়িগুলো চালকবিহীন হবার ফলে 99% দুর্ঘটনা কমে যাবে। এবং সেই কারণেই গাড়ি বীমা করানো বন্ধ হবে এবং গাড়ি-বিমার কোম্পানি গুলো সব উঠে যাবে।
গাড়ি চালানোর মত কাজগুলো আর পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে না। 90% গাড়িই যখন রাস্তা থেকে উধাও হয়ে যাবে, তখন ট্রাফিক পুলিশ এবং পার্কিং-এর কর্মীদেরও কোন প্রয়োজন থাকবে না।
ভেবে দেখুন, আজ থেকে 5-10 বছর আগেও রাস্তার মোড়ে মোড়ে STD বুথ ছিল। দেশে মোবাইল বিপ্লব আসার পর, এই সবকটা STD বুথই কিন্তু পাততাড়ি গুটাতে বাধ্য হল। যেগুলো টিকে রইল, তারা মোবাইল রিচার্জের দোকান হয়ে গেল। এরপর মোবাইল রিচার্জেও অনলাইন বিপ্লব এল। ঘরে বসেই অনলাইনে লোকে মোবাইল রিচার্জ করা শুরু করল। এই রিচার্জের দোকান গুলোকে তখন আবার বদল আনতে হল। এরা এখন কেবল মোবাইল ফোন কেনা-বেচা এবং সারাইয়ের দোকান হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সেটাও বদলাবে খুব শিগগিরই। Amazon, Flipkart থেকে সরাসরি মোবাইল ফোন বিক্রি বাড়ছে।
টাকার সংজ্ঞাও পাল্টাচ্ছে। একসময়ের নগদ টাকা আজকের যুগে "প্লাস্টিক টাকায়" পরিণত হয়েছে। ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ডের যুগ ছিল কদিন আগেও। এখন সেটাও বদলে গিয়ে হয়ে যাচ্ছে মোবাইল ওয়ালেট-এর যুগ। Paytm-এর রমরমা বাজার, মোবাইলের এক টিপে টাকা এপার-ওপার।
যারা যুগের সাথে বদলাতে পারে না, যুগ তাদের পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়। তাই ক্রমাগত যুগের সাথে বদলাতে থাকুন।
সাফল্যকে সাথে রাখুন, সময়ের সাথে থাকুন।

Saturday, September 08, 2018

আহা প্রেমিক বেচারা ! Memorable Love Story

একজন পুরুষ যতটা সুদর্শন হলে কোন রমণীর ভাবনার জগৎটা যুদ্ধবিগ্রহ ছাড়াই দখল করা নিতে পারে ঠিক ততটাই সুদর্শন ছিল পরেশ ।জোড়া ভ্রু,ইয়া বড় চোখ,ঠান্ডা মেজাজ,চওড়া বুক আর খোঁচা খোঁচা দাড়িতে স্মীত হাসি দিয়ে যেকোন রমণীকে সহজেই ঘায়েল করতে পারত পরেশ ।দিদির সাথে সাড়ে তিন বছরের ভালবাসাবাসির সম্পর্ক ছিল আর এখন তো সারাজীবনের জন্য ! পরেশ দিদিকে যে চিঠি লিখছে সবগুলোই আমার পড়া ,আমি লুকিয়ে লুকিয়ে পরেশের দেয়া চিঠিগুলো পড়ে নিতাম ।দিদির কাছে চিঠি পৌছাবার একমাত্র বিশ্বস্ত মাধ্যম আমিই ছিলাম ,পরেশ আমার বা হাতের মুঠোয় চিঠি গুজে দিত আর ডান হাতে টকঝাল লজেন্স ।দিদির পাশে শুয়ে আমি লজেন্সের প্রাণটা একবারে শুষে নিতাম আর দিদি নিত পরেশের চিঠির শব্দব্রহ্মান্ডে লুকোনো অনূভূতিগুলোকে ।এমন সময় গিয়েছে যে মাঝ রাতে পরেশের ফিসফিসানি ডাকে আমার ঘুম ভেঙে গেছে ,মেজাজ বিগড়ে তখন চোখ পাকিয়ে বলতাম-পরেশ দা এত রাতে ঘুম না ভাঙালে হত না? পরেশ হাসিহাসি মুখ করে বলত - শ্যালিকা এই কান ধরলাম আর এমন হবেনা ,অর্পাকে একটু ডেকে দাওনা ।দিদি বেহুশ হয়ে ঘুমাতো ! অনেক ডাকাডাকি করে ঘুম ভাঙিয়ে আমি শুয়ে পড়তাম ।পরেশ জানালার বাইরে থেকে দিদির হাত ধরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সারা রাত গল্প করে কাটিয়ে দিত! পরেশ কোনদিন কথা রেখেনি ,দেখা যেত পরেরদিন মাঝ রাতে এসে সে আবার ফিসফিসিয়ে ডাকাডাকি শুরু করে দিয়েছে! আমি চোখ পাকিয়ে মেজাজ দেখালে সে হাসিহাসি মুখ করে জিহ্বা কামড়ে বলত "শ্যালিকা কান ধরলাম আর করব না এমন" ।আসলে তার হাসিহাসি মুখ দেখে কোন আবেদন উপেক্ষা করার শক্তি ঈশ্বর আমাকে দেননি ।
দিদি পড়ত কলেজে আর আমি মেট্রিক দিব তখনই দিদির সাথে ভাব ভালবাসা হয় পরেশের ।একই সাথে দু বোন স্কুল কলেজে যেতাম ,ফেরার পথে পরেশও থাকত আমাদের সাথে ।পরেশ আর দিদি মন্দিরের পেছনের বটগাছটার নিচে বসে পড়ত আর পাহারা দিতে হত আমাকে ।স্কুল থেকে ফেরার পথে বা স্কুল ফাঁকি দিয়ে দু বোনকে নিয়ে মেলায় যেত পরেশ ।দিদিকে এক গোছা কাচের চুড়ি দিলে আমাকে দিত দুই গোছা! দিদি বাড়ি এসে গাল ফুলিয়ে বলত -দেখ তোকে সবকিছু বেশি বেশি দিয়েছে ,আমাকে সবসময় ই কম কম ।দিদি যে তখন মিথ্যে মিথ্যে অভিমানের খেলা খেলত সেটা দুজনেই বুঝেও অবুঝ থাকতাম ,কেননা এতে অন্যরকম প্রশান্তি দুজনেই পেতাম যে ।

একবার হল কী ,দিদির সারা গায়ে পক্স উঠল! মা এসে দু বোনের বিছানা আলাদা করে দিয়ে বললেন - দু বোনের একসাথে পক্স উঠলে সে ঠেলা আমি সইতে পারব না ।আমিও ভয়ে ভয়ে একটু দূরে সরে থাকতে লাগলাম ।এর মাঝে স্কুল কলেজ যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল ,মাঝ রাতে পরেশ জানালার ওপাশ থেকে আমাকে বলল- সম্পা পিছনের দরজাটা একটু খুলে দাওনা আমি একটু দেখেই চলে যাব ,দিদি তখন ঘুমে থাকায় আমি অনেক্ষন সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগার পরে পরেশের অনুরোধের কাছে হেরে গিয়ে দরজা খুলে দিয়েছিলাম ।পরেশ ঘরে ঢুকেই দিদির পক্স ওঠা কপালে চুমু খেল! হাতে ওঠা প্রতিটা পক্সে চুমু খেল! ভোর হবার আগ পর্যন্ত দিদির মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেল ।দিদি কিছু টের পায়নি ,সকালে দিদিকে রাতের ঘটনা খুলে বলার পর দিদি মুচকি মুচকি হাসির সাথে কয়েকফোটা অশ্রু ফেলেছিল! এর আগে কখনো আনন্দ অশ্রু দেখিনি ,সেদিন ই প্রথম দেখেছিলাম।
পরেশের দেয়া চিঠি পড়ে পরেশের ভেতরে থাকা মানুষটার প্রতি সম্মান বেড়ে যায় ,সেই সাথে মুগ্ধ হয়ে যায় ।একটা মানুষ এত সুন্দর করে ভালবাসতে পারে কী করে! পরেশের প্রতি কেন যেন অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করত ,পরক্ষণে যখনই দিদির কথা মনে পড়ত তখনই নিজের অবচেতন মনের আকাঙ্ক্ষার কবর দিতাম ।
পরেশের সাথে একবার কী একটা নিয়ে দিদির খুব ঝগড়া হয়েছিল ,আসলে ঝগড়াটা দিদিই বাধিয়েছিল ।পরেশ চুপ করে শুধু শুনেছিল ।দিদি খুব শক্ত মনের আমার মত গলে যাওয়া টাইপ না ,পরেশের সাথে দু রাত কথা বলেনি! পরেশ জানালার পাশে এসে সারা রাত দাঁড়িয়ে ছিল! আমার বেচারার জন্য খুব মায়া হত ।তৃতীয়দিনের মাথায় দিদির অভিমান ভাঙাতে পরেশ দানাদার,পকেটে করে বকুল ফুল আর এক টুকরো কাগজ এনেছিল কয়েক লাইনের কবিতা ছিল তাতে
অভিমানে অভিমানে বজ্রপাত! ভালবাসা মুখ থুবড়ে ভালবাসা খোঁজে।
কবেকার কোন অনুরাগে এতটা দূরত্ব! বৈরাগ্যর জীবন আমায় শুষে খায় প্রিয়তমার গালের টোলে অভিমান বাসা বেধে শহর পুড়ে ছাই! আহা প্রেমিক বেচারা! আহা প্রেমিক বেচারা!
মাঝ রাতে প্রমিক বেচারার শরীর ছুঁয়ে থার্মোমিটার গলে,কাশির শব্দে রক্ত গড়িয়ে পড়ে! প্রণয়িনীর একটু ডাকের অপেক্ষায় প্রেমিক আশায় বুক বাধে, ও পাশ থেকে কেউ বলুক "শরীর কী খুবই খারাপ?" আফসোস কর্পোরেটের এই যুগ অনূভুতি থেকে ছুটে পালায়! আহা প্রেমিক বেচারা ! আহা প্রেমিক বেচারা!
দিদির হাতে কাগজটা দিয়েছিলাম ,দিদি কি ভবে যেন সেটা হাত বাড়িয়ে নিয়ে পড়তে শুরু করেছিল । কবিতা পড়ার শেষে দিদির চোখে পানি টলমল করছিল ,দরজা খুলেই পরেশের কাছে গিয়ে আচমকা জড়িয়ে ধরে বলে- এত জ্বর নিয়েও আমায় দেখতে চলে এলে! দুজন দুজনকে জাপ্টে ধরে সেদিন সে কী কান্না! এই কান্না যে সেদিন কাল হয়েছিল তাদের জন্য!
বাবার কাছে সেদিন ধরা পড়ে গিয়েছিল দুজন ।বাবা আমাকে মেরেছিলেন সেদিন ,মা ও আমাকে মেরেছিলেন ।দিদিকে ,পরেশকে কাওকে কিচ্ছু বলেননি ।এর মাঝে কত কী হয়ে গেল! মা আল্টিমেটাম দিলেন তিনি উঠানের আম গাছে গলায় দড়ি দিয়ে মরবেন যেদিন শুনবেন দিদি পরেশের সাথে আর একটা কথা বলেছে! বাবাও জানিয়ে দিলেন- দিদির যা ইচ্ছা করুক ,তবে তার কথা না শুনলে তিনি কলকাতা চলে যাবেন ।আর কখনো কাউকে মুখ দেখাবেন না।পরেশের বাবাও পরেশকে ব্যবসার কাজে দিনাজপুর পাঠিয়ে দিলেন ।এর মাঝে দিদির বিয়ে হয়ে গেল জগন্নাথ পাড়ায় পরেশের সাথে কোনরকম যোগোযোগের জো ছিল না তখন ।দিদি হাউমাউ করে বাবার পায়ে ধরে ,মায়ের পায়ে ধরে কেঁদেও কোন ফল পায়নি ।চেনা বাবা মা সেদিন অনেক অচেনা হয়ে গিয়েছিল ।
বিয়ের তেরোদিন পর পরেশ আমাদের বাড়িতে এসে সে কী কান্না! উঠানের কোনায় বসে পড়েছিল ঝিয়ের কাছ থেকে দিদির বিয়ের খবর পেয়ে ।আমার সেদিন সাহস হয়নি পরেশকে শান্ত্বনা দেওয়ার ।বাবা পরেশের বাবাকে খবর দিলে তারা এসে নিয়ে যায় পরেশকে ।এর মাঝে দিদিকে একবার দেখতে গিয়েছিলাম ,দিদি আমাদের কারো সাথে কোন কথা বলেনি সেদিন ।এরপর টানা সাতটা মাস ধরে পরেশের দেখা পায়নি ,দিদিও আসেনি আমাদের বাড়িতে। বাবা আনতে গেলেও সে আসেনি ,মা বাবা পায়ে ধরতে বাকি রেখেছিল তবুও দিদি আসেনি ।
বছরখানেক পর পরেশের সাথে দেখা হয়েছিল শ্যামগঞ্জে ।একটা সবুজ ফতুয়া পরেছিল সেদিন ,বিদ্যুতের মোটা তারের উপর বসে থাকা কাকগুলোর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল সে ।কাছে যাবার সাহস হয়নি আমার ।ভ্যানে করে আই.এ পরীক্ষার হলের দিকে যাচ্ছিলাম ।লোকের মুখে শুনেছি পরেশ এক জায়গায়া থাকেনা ,বাড়িতেও যায়না ।এদিকসেদিক ঘুরে বেড়ায় ।বিএতে ভাল রেজাল্ট আছে ,ভাল চাকরীর সুযোগ থাকলেও করেনি পরেশ ! দিদিদের বাড়ির পাশে প্রথম প্রথম ঘুরঘুর করত তারপর আর নাকি সেদিকেও যায়নি সে ।
বাবা মারা গেছেন আজ চার মাস ,দিদি শশানে বাবাকে পোড়াতে এসেছিল ।মাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদেছে দিদি ।পরেশ বাবার শেষকৃত্যর সব ব্যবস্থা নিজে থেকেই করেছে ।দিদির দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়েছিল পরেশ ,দিদি তাকানোর সাহস পায়নি একবারের জন্যও ।দিন চারেক পর দিদিও চলে গেছে শ্বশুরবাড়ি। মা সারাদিন কাঁদেন ,আমিও কাঁদি বাবার চাদর জড়িয়ে ধরি কাঁদি ,বাবার চেয়ারটা দেখে কাঁদি । বাড়ির বাজার করা থেকে সবটায় পরেশ করে দেয় ।পরেশ পাড়ার হাই স্কুলে শিক্ষক হিসেবে জয়েন করেছে এর মাঝে ।পরেশ এতদিনেও দিদিকে ভুলতে পারেনি ,দিদির ঘরের দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে থাকে ।দিদির নামটা কারো মুখে শুনলেই তার দিকে তাকিয়ে থাকে ।মা আর পরেশ দুজনের তাকানোর ধরনটা একইরকম ,দুজনের ভেতরটাই প্রিয়জন হারানোর এক সমুদ্দুর শূন্যতা ভর করে থাকে ।
একদিন সন্ধ্যাবেলা পরেশের মা বাবা এসে আমাদের বাড়ি হাজির।আমার সাথে পরেশের বিয়ে ঠিক করল আমার মায়ের সাথে আলাপ করে । পরদিন সন্ধ্যায় হাট থেকে ফেরার পরে পরেশকে ছাদে পেয়ে বলেছিলাম - পরেশ দা তুমি আমার সাথে সংসার করতে পারবে তো? তুমি মন থেকে আমার কাছে আসতে পারবে তো? পরেশ অন্যদিকে মুখটা ঘুরিয়ে বলেছিল- অর্পার চোখের নিচের কালো দাগটা দেখেছো সম্পা? কত রাত ও নির্ঘুম কাটিয়েছে সে হিসেব ওর চোখের দিকে তাকালেই বোঝা যায় ।আমি সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে ভেবেছিলাম মাকে গিয়ে বলব এই বিয়ে ভেঙে দিতে ।কোন এক অজানা কারনে সেটা বলার সাহস হয়ে ওঠেনি সেদিন ।তখন মনে মনে জেদ করেছিলাম "দিদির চেয়েও পরেশকে বেশি ভালবাসব আমি ,আস্তে আস্তে ঠিক করে নিব " ।
বিয়ে হয়ে গেল ছয়মাস ।পরেশ একটুও বদলায়নি ,আমি যখন বিছানায় তার দিকে ফিরে তাকে জড়িয়ে ধরি তখন সে বলে "অর্পার গায়ের গন্ধটা এখনো পায় জানো তো ,অর্পা হাওয়াই মিঠাইয়ের মত আমার সাথে নিজেকে মিশিয়ে নিত" ।আমার তখন নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়া ছাড়া কোন উপায় থাকত না ,নিজের দিদির প্রতি নিজের ই তখন হিংসে হত ,একটা মেয়ে কতটা কপাল নিয়ে জন্মালে এমন ভালবাসা পেতে পারে যে কিনা পাবেনা জেনেও এখনো তাকেই ভালবাসে! ছাদে শাড়ি নাড়ার সময় চোখ বুজে কল্পনা করতাম পরেশ পেছন থেকে এসে আমার আধখোলা কোমরটা দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে আমার ঘাড়ে নাক ঘষে ঘষে আমায় লাল করে দিচ্ছে কিন্তু এমনটা শুধু কল্পনাতেই হত ।পরেশ আমার থেকে একটা দূরত্ব রেখে চলত সব সময়ই ।অনেক অনুনয় করেও দু লাইন কবিতা শোনার সৌভাগ্য হয়নি আমার আর সেখানে ঘনিষ্ঠতা, আদর সোহাগ তো মেলা দূরের ব্যাপার৷
গতকাল দিদি বাড়ি চলে এসেছে । দিদি নাকি বাজা! কোনদিন নাকি তার বাচ্চা হবেনা ,ডিভোর্স হয়ে গেছে নাকি দেড়মাস আগেই! আমরা কেউ কিছুই জানতাম না।এর মাঝে জামাই বাবু নাকি আরেকটা বিয়েও করে নিয়েছে! অপমানের মাত্রা সহ্য করতে না পেরে গতকাল চলে এসেছে ।দিদির অসহায় অবস্থা চিন্তা করে যতটা না খারাপ লাগছে তার চেয়ে বেশি ভয় হচ্ছে আমার! এ ভয় অন্তর্দহনের ভয় ,পেয়েও হারাবার ভয় ।
পরেশ ইদানীং ঘনঘন আমাদের বাড়িতে যাচ্ছে ,দিদি পরেশকে নিষেধ করার পরেও সে যাচ্ছে ।এমনটাই বলেছে মা ।পরেশকে কিছু বলার মত অধিকার কাগজে কলমে আমার থাকলে ,আত্নিক কোন অধিকার নেই ।আমি তো তার কাগজে বউ শুধু মাত্র এছাড়া আর কিছু না ।কোন জোরে তাকে মানা করব? আর মেয়েটা তো অন্য কেউনা ! আমার দিদি,পরেশের ভালবাসার মানুষ ।পরেশ কোনদিন আমার গায়ের গন্ধ খোঁজেনি ,আমার চোখের নিচে জমতে থাকা কালো দাগ নিয়ে উদ্বেগ দেখায়নি ।যা ছিল সবটাই দিদির জন্য।কোন কমিটমেন্ট দেয়নি সে আমাকে ,তাহলে কোন অধিকারে ,কিসের জোরে আটকাবো তাকে আমি!
অনেক রাত হল পরেশ বাড়ি ফেরেনি ।ইদানীং অনেক রাত করে ফেরে সে ,দিদি ঘরের দরজা আটকে শুয়ে থাকে আর সে বাইরে বসে থাকে! হ্যারিকেনটা নিয়ে আমাদের বাড়িতে চলে আসলাম ।দিদির ঘরের দরজাটা একটু ফাঁক করে রাখা ,জানালার পাশে সরে আসলাম ।ভেতর থেকে দিদির গলায় স্পষ্ট শুনতে পেলাম "এ সম্ভব না পরেশ ,আমাকে মেরে ফেলো তবুও আমার বোনের সংসারটা ভেঙোনা" জানালা দিয়ে দেখলাম পরেশ দিদির কোমরটা তার দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বুকের সাথে জাপ্টে ধরে আছে ,দিদি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে ।হ্যারিকেনের উষ্ণ কাচে আঙুল পোড়া দাগটা বোঝা যাবে কাল দিনের আলোয় তবে মনের পোড়া দাগ! সে কী দেখা যাবে?
দিদির জীবনে কাউকে খুব করে দরকার যে আমার বাজা দিদিকে শর্তহীনভাবে ভালবেসে যাবে শেষ বয়সে এসেও ।আমার মা টাকেও যে দেখবে এমন কাউকে দরকার দুজনের জীবনে ।ডিভোর্স পেপারটা টেবিলের উপর রেখে বেরিয়ে আসলাম ।কলকাতা গিয়ে কিছু একটা করে নিব নিজের জন্য ,একটা মানুষের বদলে তিনটে মানুষ ভাল থাকলে ভগবানে খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যাবেনা।জীবনে হয়ত অন্য কারো বুকে মাঝ রাত্তিরে নাক ঘষে লাল করব ,হয়তোবা করবোনা ।নরম বুক জুড়ে হয়তো আমার বাচ্চাটার আলতো কামড়ের স্পর্শ পেয়ে সারাজীবন কাটিয়ে দিব ,হয়তোবা না ।তবুও যে আমার জীবনে দুটো অপশন থেকে যায় ,কিন্তু আমার দিদির জীবনে যে আর কোন অপশন ছিল না ।
লেখাঃ Borhan uddin